মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে মর্টারশেল ও বোমা বিস্ফোরণের কারণে টেকনাফের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। তীব্র বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফের সীমান্ত জনপদ। আতঙ্কে ঘুমাতে পারেনা লোকজন। তীব্র কম্পনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শিশুরা। এছাড়া মহিলা ও বৃদ্ধ লোকজন ভয়ে কাঁপতে শুরু করে। অনেকে বাধ্য হয়ে নিজ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
গতকাল বুধবার (১৬ অক্টোবর) ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্তও একই ধরনের বিকট শব্দ পাওয়া যায় ও যুদ্ধবিমানের চক্কর দিতে দেখা গেছে।
টেকনাফের স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর ঘিরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই আরও তীব্র হয়েছে। টানা তিনদিন ধরে সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে এপারে। মিয়ানমারের আকাশে যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে দেখা যায়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, বিকট বোমা বিস্ফোরণে কাঁপছে টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকা। প্রবল কম্পনের ফলে টেকনাফের একটি গ্রামের অন্তত অর্ধ-শতাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ সময় মিয়ানমারের আকাশে যুদ্ধবিমানের চক্কর দেখা গেছে। বিমানের চক্করের সঙ্গে সঙ্গে ভেসে আসে বিকট শব্দ।
বুধবার রাতে টেকনাফের সাবরাং এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানুষ খুব আতঙ্কে আছে। গতকাল রাত ৯ টার দিকেও ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ঘরে-বাইরে সবখানে তীব্র আওয়াজে স্থির থাকা দায় হয়ে গেছে। লোকজন একটু শান্তির জন্যে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছেন। বিশেষ করে বাড়ির শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধ লোকজন খুব ভয় পান। তীব্র শব্দে ভয়ে রীতিমতো শিশুরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক আহমেদ জানান, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকি। রাতে ঘরে এসে একটু ঘুমাতে পারিনা। ওপারের বিকট শব্দে ঘরবাড়ি কাঁপে। আমার এলাকায় অনেক ঘরে ফাটল ধরেছে। দেয়াল ধসের আশঙ্কায় অনেক মানুষ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়িতে চলে যাচ্ছেন। আমার বাড়ির পাশে এক গ্রামেই পাঁচটি বাড়িতে ফাটল ধরেছে।
একই গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদা বেগম বলেন, চার মাসের বেশি সময় ধরে ওপারের বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আসছেন তারা। মাঝেমধ্যে ওপারের গুলি এসে এপারের ঘরবাড়িতে পড়ছে। বিকট শব্দে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফাটলে দেয়াল ধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কায় ঘরের বাইরে রাত কাটাচ্ছেন তারা। ঘর মেরামতের সামর্থ্যও তাদের নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ শরীফ বলেন, মিয়ানমারের মংডু শহরের পশ্চিম পাশে নাফ নদী। এর প্রস্ত তিন কিলোমিটার। এই নদীর পাড়েই আছারবুনিয়া গ্রাম। বিকট বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে গ্রামটি। এরই মধ্যে গ্রামটির অন্তত ২০টি মাটির দেয়ালের বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। মর্টারশেলের বিকট শব্দে ঘুমানো যায় না। রাত হলে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বেড়ে যায়। নাফ নদীর কারণে বোমা বা মর্টার শেল এপারে সরাসরি না পড়লেও শাহ পরীর দ্বীপ, টেকনাফ স্থলবন্দর ও দমদমিয়া এলাকায় বেশ কিছু বসতবাড়ি ও অফিসে গুলি এসে পড়ছে।
ইউপি সদস্য শরীফ আরও বলেন, মঙ্গলবার রাতে বিকট বিস্ফোরণের কাঁপুনিতে মানুষের বাসাবাড়ির দেয়াল ফেটে গেছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পাশাপাশি নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আছারবুনিয়া সমাজ কমিটির সভাপতি রফিক উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার রাতে বোমার শব্দে কাঁপুনিতে এলাকার ২০-২৫টি সেমিপাকা টিনশেড ও মাটির দেয়ালে বড় বড় ফাটল ধরেছে। এখন এসব ঘরে বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ওপারের বিস্ফোরণে সাবরাং ইউনিয়নসহ কয়েকটি গ্রামে লোকজনের ঘরবাড়িতে ফাটল ধরেছে। আতঙ্কে সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। তাদের নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হচ্ছে। রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক আছে।
ইউএনও বলেন,বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : মিয়ানমার টেকনাফ তীব্র বিস্ফোরণ ঘরবাড়িতে ফাটল
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh