গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মূল্যবান সরকারি সম্পত্তি দখলের উৎসব চলছে। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল প্রকাশ্যেই এই সম্পত্তির ওপর দোকান ঘর নির্মাণ করে তা ভাড়া দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার নিজের ইচ্ছে মতো দোকান ঘরও নির্মাণ করেছেন। এসব দখল বাণিজ্যের পেছনে রয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু লাইসেন্স বিহীন দলিল লেখক।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, অফিসের জমি ৫৩ শতাংশ। এর মধ্যে ৪ শতাংশ জমি রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য অধিগ্রহণ করে সরকার। মূল অফিস ভবনটি ৩৬ শতাংশ জায়গার উপর অবস্থিত। বাকি ১৩ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে। এই জমিতে প্রায় ১২টি দোকান ঘর রয়েছে। যার কিছু ব্যবহৃত হচ্ছে দলিল লেখকদের কাজের জন্য এবং বাকি অংশ প্রভাবশালী মহল ভাড়া দিয়ে চলছেন। অভিযোগ রয়েছে, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু দলিল লেখক এই দখলের সঙ্গে জড়িত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দলিল লেখক জানান, যুগের পর যুগ ধরে সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনের অন্তত ১৩ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে। এর মধ্যে কয়েকটি দোকান দলিল লেখকরা নিজেরাই ব্যবহার করছেন। তবে বেশিরভাগ দোকান স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভাড়া দিয়ে নিয়মিত টাকা আদায় করছেন।
বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই অবৈধ দখল উদ্ধার করার চেষ্টা চালালেও অজ্ঞাত কারণে তা থেমে যায়। প্রশ্ন উঠছে, কিভাবে সরকারি জমিতে অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করে তা ভাড়া দেওয়া হচ্ছে, কেনই বা কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
রুবেল মল্লিক নামে লাইসেন্সবিহীন একজন দলিল লেখক জানান, ইতিপূর্বে তার লাইসেন্স থাকলেও বর্তমানে নেই। তিনি দাবি করেন, দোকানটি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই চালাচ্ছি। এখানে আরো দুইজন দলিল লেখক বসেন।
আনন্দ কুমার নামে লাইসেন্স প্রাপ্ত একজন দলিল লেখক বলেন, আমার দোকানটি সেরেস্তার কাজে ব্যবহার করি। তবে অন্যরা যেভাবে এই দোকানগুলো ব্যবহার করে, আমিও সেভাবেই করি।
বাদশা মিয়া নামে আরেকজন নিজেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত দলিল লেখক হিসেবে দাবি করলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তার নামে কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। তিনি একটি দোকান দখল করে সেখানে দলিল লেখকদের জন্য কাজ পরিচালনা করেন। তিনি জানান, আমার দোকান ঘরটি দলিল লেখকরা সেরেস্তার কাজে ব্যবহার করে থাকেন।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাব-রেজিস্টার মো. মেহেদী হাসান জানান, সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা করার কোনো সুযোগ নেই। আমি প্রাথমিকভাবে পরিদর্শন করে অবৈধ দখলের সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি। তারপরও বিষয়টা নিয়ে অধিকতর পর্যালোচনা করছি। শতভাগ দখলের সত্যতা প্রমাণিত হলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই দখলের সাথে কারা জড়িত এমন প্রশ্নের জবাবে সাব-রেজিস্টার বলেন, প্রাথমিকভাবে দুজনের নাম আমি জানতে পেরেছি। যেহেতু সরকারি বিষয় তাই এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলমান রয়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh