রাজশাহীর পুঠিয়া ত্রিমোহনী বাজার এলাকার পুঠিয়া মডেল মসজিদের প্রধান ফটক উপজেলার অবৈধ মার্কেটের সামনের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে রমরমা বাণিজ্যেও চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও ইজারাদার। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।
বছরের পর বছর এ অবস্থা চললেও পৌরসভা এবং উপজেলা প্রশাসন নিরব। সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না তারা বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও পথচারীদের। সড়ক ও ফুটপাত দখলে থাকায় পথচারীরা বাধ্য হয়ে (ঢাকা-রাজশাহী) হাইওয়ে মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করছেন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। অন্যদিকে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। কোটি-কোটি টাকা ব্যয় করে তৈরি হয়েছে মডেল মসজিদ অথচ মসজিদটির দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যও ঢাকা পড়েছে এসব অবৈধ স্থাপনায়।
সরোজমিনে উপজেলা পরিষদ মার্কেটসহ বিভিন্ন সড়কগুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দোকানের সামনের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে। কেউ কেউ বেঞ্চ বসিয়ে আবার কেউ দোকানের মালামাল ফুটপাতের উপর রেখে লোহার গ্রিল দিয়ে রাস্তা পর্যন্ত সীমানা দখল করে রেখেছে। ত্রিমোহনী বাজারের রোডগুলো প্রায় ১০ থেকে ১৫ ফুট চওড়া। রাস্তার দুই পাশে ফুটপাত রয়েছে প্রায় আড়াই থেকে তিন ফিট। এদিকে পুঠিয়া হাসপাতাল গেট থেকে পৌরসভা পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক দোকান রয়েছে। অধিকাংশ দোকানের মালামাল দিয়ে ফুটপাত দখল করে রাখা রয়েছে। কিছু কিছু দোকানের মালামাল সড়কেও রাখা হয়েছে।
পথচারী রেজাউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বাজারের রাস্তাটি খুবই অপ্রশস্ত। এ রাস্তা দিয়ে অটোরিকশা, মোটর-সাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে রাস্তার দুই পাশে ফুটপাত দখল করে রেখেছে দোকানদাররা, তাই সব সময় যানজট লেগেই থাকে।
আরেক পথচারী হাসান মাহমুদ বলেন, ফুটপাত দখলে থাকায় রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। গত সপ্তাহে আমার বন্ধু এদিক দিয়ে চলাচল করার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন এবং মহিলাদের চলাচল করতেও ব্যাপক সমস্যা হয়। মডেল মসজিদের প্রধান ফটকে প্রায় ১০ ফুট চওড়া ফুটপাত থাকলেও বেশিরভাগ অংশ চার থেকে পাঁচজন মোদি দোকানদার সীমানা বাউন্ডারী দিয়ে এবং বিভিন্ন মালামাল রেখে দখলে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ফুটপাত দখল করার ব্যাপারে কয়েকজন দোকানের মালিক-কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়। দোকান মালিক রহমান বলেন, অন্য সব দোকানের মালামাল সামনে রাখে, তাই আমরাও রাখি। এতে আমাদের দোষ কী?
সুভাষ ভ্যারাইটিজ স্টোরের কর্মচারী জানায়, পথচারীরা রাস্তা দিয়ে চলাচল করবে। পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযানে আসে না। ফুটপাতে মালামাল রাখলে ক্রেতাদের আকর্ষণ বাড়ে।
স্থানীয় ফুটপাতের কলা ব্যবসায়ী বলেন, ফুটপাতে দোকান রাখলে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে তিনি বলেন, দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা পুঠিয়ার স্থানীয় তাই উচ্ছেদ করা হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকান মালিক বলেন, পুঠিয়া উপজেলা মার্কেটই অবৈধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে উপজেলা পরিষদ মার্কেট বাণিজ্য করছে। তাহলে এগুলো দখলমুক্ত করবে কে? প্রতি মাসে ভাড়া দিয়ে আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রেখেছি।
স্থানীয় কয়েকজন পথচারী ও এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, এসব দোকানে কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় সড়ক ও ফুটপাত দখল করে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। তাই দ্রুত ফুটপাত দখলমুক্ত করে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করার আহ্বান ভুক্তভোগীদের।
এ বিষয়ে জানতে পুঠিয়া পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাক বলেন, খুব শীঘ্রই জেলা প্রশাসন থেকে একটি নির্দেশনা আসার কথা রয়েছে। নির্দেশনাটি পেলে দ্রুত ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব হবে। উপজেলা প্রশাসন মার্কেট উচ্ছেদের নির্দেশ দিলে দখল মুক্ত হবে, পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদেরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
এসব বিষয়ে জানতে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, মার্কেট এবং ফুটপাত সম্পর্কে মৌখিক নানান অভিযোগ পেয়েছি। এই সকল স্থানগুলোতে আমি ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছি। খুব শীঘ্রই উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh