জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮ এএম
আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
পরিযায়ী পাখিসহ বন্য প্রাণী রক্ষণাবেক্ষণের অভাবসহ নানা কারণে হুমকির মুখে সুনামগঞ্জের মানুষের হৃৎপিণ্ড খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওর। বছরের পর বছর ধরে হাওরে মাছ ধরা, অবাধে পশু-পাখি শিকার, গাছগাছালি, উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে। যে কারণে ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে সংকটাপন্ন ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি একে ‘রামসার’ ঘোষণা করা হয়। রামসার কনভেনশন হলো বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষার একটি সম্মিলিত প্রয়াস।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা ও ধর্মপাশা উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর গঠিত। এই হাওরকে ১০৩১তম রামসার সাইট ঘোষণা করার পর সেখানে ইজারা প্রথা বাতিল হয়ে যায়। তবে সচেতন মহল বলছে, টাঙ্গুয়ার হাওরে ইজারা প্রথাই ভালো ছিল। মাছ, পাখি, গাছ, জীববৈচিত্র্যসহ সব বিষয় নিয়ন্ত্রণে থাকায় পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ইজারা প্রথা বিলুপ্ত করার পর থেকেই টাঙ্গুয়ার হাওর দিন দিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।
ছোট-বড় ১২০টি বিল আছে এই হাওরে। ৬৮টি গ্রামসহ পুরো হাওর এলাকার আয়তন প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে দুই লাখ ৮০ হাজার ২৩৬ হেক্টর জলাভূমি। প্রতি বছর এ হাওরে প্রায় ২০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে। এ ছাড়া প্রায় ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১৫০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণীর আবাস।
জানা যায়, প্রতি বছর শীত শুরুর আগে থেকেই সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ শীতপ্রধান দেশ থেকে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আসে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের আশায়। এ সময় পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে এসব হাওর। তবে চার-পাঁচ বছর ধরে পাখি আসছে না। যা আসছে তা নামমাত্র। শিকারিদের কারণে পরিযায়ী পাখি নিজেদের জীবন বাঁচাতে নিজ দেশ ত্যাগ করে এ দেশে এসেও রক্ষা পাচ্ছে না। এখন হালকা শীত পড়লেও এ বছর এখন পর্যন্ত অতিথি পাখি আসেনি। অথচ এমন সময় পাখির ডাক শোনা যেত।
অতিথি পাখি না এলে হাওরের তলদেশ শেওলায় ভরে যাবে। পানিতে অক্সিজেন থাকবে না। পাখির মলের অভাবে মাছ পুষ্টিকর হবে না। যেখানে প্রতি বছর শীতে লক্ষাধিক অতিথি পাখি আসত গত (২০২০ সালে) মাত্র ২৫ হাজার অতিথি পাখি এসেছে। কোনো এলাকায় যখন ২০ হাজারের মতো পাখি দেখা যায়, তখনই জাতিসংঘের ইউনেসকো সেটিকে রামসার সাইট ঘোষণা করে। এই পাখি আসা ২০ হাজারের নিচে নেমে গেলে ও পাখি নিধন বন্ধ না হলে, বন্য প্রাণী রক্ষা করতে না পারলে ইউনেসকো টাঙ্গুয়ার নাম কেটে দেবে, ফলে টাঙ্গুয়ার নাম বিশ্ব ঐতিহ্য থেকে মুছে যাবে।
পাখি ও মাছ শিকারি কিছু অসাধু মানুষের পরিবেশ ধ্বংসকারী কার্যকলাপে টাঙ্গুয়ার হাওর এখন হুমকির মুখে। এই হাওর রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে জেলা প্রশাসক ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন) যৌথভাবে হাওরের দায়িত্ব নিলেও কোনো সুফল আনতে পারেনি। বরং টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য, সম্পদ ধ্বংস হয়েছে বলে অভিযোগ হাওর পারের বাসিন্দাদের।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh