চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট এলাকায় মেঘনা নদীতে নোঙর করা সারবাহী এমভি আল বাকেরা জাহাজে দুর্বৃত্তদের হামলায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা তিনটার দিকে ৫ জনকে নিহত ও ৩ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। আহত ৩ জনের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজন মারা গেছেন। ফরিদপুর সদর উপজেলার বকারটিলা গ্রামের সেকান্দার খালাসির ছেলে জুয়েল রানা (৩৫) একমাত্র বেঁচে আছেন। তার শ্বাসনালী কেটে যাওয়ায় তিনি কথা বলতে পারছেন না। তাই কাগজে লিখে বোঝানোর চেষ্টা করছেন।
এদিকে নিহত সাতজনের মধ্যে ছয়জনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন জাহাজের মাস্টার ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের গোলাম কিবরিয়া (৬৫) ও লস্কর সবুজ শেখ (২৬)। সম্পর্কে তারা মামা–ভাগনে। চালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল ও সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার আজিজুল ও মাজেদুল এবং লস্কর সবুজ শেখ।
গতকাল সোমবার রাতে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টিকে ডাকাতি বলে মনে করছি না। আমাদের মনে হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ, সেখানে দুটি মুঠোফোন, মানিব্যাগ ও অন্যান্য জিনিসপত্র অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
তবে নৌ শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বালু মহালের ইজারার নামে চলন্ত বাল্কহেডের (বালু পরিবহনকারী নৌযান) গতিরোধ করে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ডাকাতি ও শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। রবিবারও মেঘনা নদীতে বেশ কয়েকটি বাল্কহেডে ও জাহাজে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে কর্মীদের মারধর করেছে।
জাহাজটির মালিক দিপলু রানা জানান, তিনি কীভাবে জানবেন এই হত্যাকাণ্ড কেন ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে আসল ঘটনা বের করতে পারবে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম থেকে রওনা হওয়ার পর রবিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে জাহাজটির মাস্টারের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়। তখন মাস্টার জানিয়েছিলেন, মেঘনা নদীতে তারা জাহাজের বহরের মধ্যেই ছিলেন। তবে সকালে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউ সাড়া দেননি।
দিপলু রানা জানান, বারবার যোগাযোগ না করে কাউকে না পেয়ে তাদের আরেকটি জাহাজের (মুগনি-৩) নাবিকদের বিষয়টি জানান। ওই জাহাজ এমভি আল–বাখেরার কাছাকাছি ছিল। তারা আল-বাখেরার কাছে যাওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পারে।
মুগনি-৩ জাহাজটির চালক মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, আমি মালিকের ফোন পেয়ে বেলা একটার দিকে এমভি আল-বাখেরার কাছাকাছি যাই। সেখানে গিয়ে আল–বাখেরায় থাকা আমার ভাতিজা জুয়েলকে ফোন করি। কোনো সাড়া না পেয়ে আমি মালিককে ফোন করি। তখন মালিক জাহাজটিতে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য বলেন।
বাচ্চু মিয়া আরও বলেন, এমভি আল-বাখেরায় গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পাঁচজনকে পড়ে থাকতে দেখেন আমাদের সুকানি রবিউল। তারা জীবিত ছিলেন না। পাঁচজনের বাইরে গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজন জাহাজে পড়ে ছিলেন। তখন আমরা ৯৯৯–এ ফোন করি। এরপর নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম ইকবাল বলেন, ‘আমরা আহত জুয়েলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি কিছু বলতে পারেননি। একটি কাগজে শুধু তার নাম আর একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে গেছে।’
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh