আজহারীর মাহফিলে স্বর্ণালংকার-মোবাইল খোয়া যাওয়ায় ৩৫০ জিডি

যশোরে আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে অসংখ্য মানুষের মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে। শুক্রবার রাতে শহরতলি পুলেটহাটের আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশ এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় ভুক্তভোগীরা জিডি করতে রীতিমতো লাইন ধরেছেন। 

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত মাহফিলে মোবাইল ও স্বর্ণালংকার খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৩৫০ জিডি হয়েছে। এখনো যেভাবে জিডি করতে ভুক্তভোগীরা থানায় আসছেন তাতে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়বে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

জানা গেছে, যশোর শহরতলি পুলেরহাটের আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। এদিন বক্তব্য দেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। তার আসার খবরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে। শুক্রবার সকালে থেকে শীত উপেক্ষা করে মানুষ জমায়েত হয়। বিকেল থেকে মাহফিল স্থান ছাপিয়ে সড়ক-মহাসড়কেও শিশু, নারী, পুরুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। দুপুরের পর সড়কে যানজট দেখা দেয়। এ জন্য অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছায়। সব সড়কের ঢেউ গিয়ে মিশে পুলেরহাটে। মাহফিল প্রাঙ্গণে পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এদিন সন্ধ্যায় আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহও বক্তব্য দেন।

রাত সাড়ে ১০টার পর মাহফিল শেষ হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে পদদলিত হয়ে একাধিক ব্যক্তির মারা যাওয়ার খবর। আহতের সংখ্যাও অর্ধশতাধিক। এ ছাড়া মোবাইল, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার খবর।

তবে হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালে পদদলিত হয়ে ২১ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাতে ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর ১১ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়াতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার জানান, শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত স্বর্ণালংকার ও মোবাইল খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৩৫০ জিডি হয়েছে।

তিনি আরো জানান, শুক্রবার রাত থেকে অসংখ্য মানুষ মোবাইল হারিয়ে যাওয়া বা চুরির ঘটনায় জিডি করতে আসেন। তাৎক্ষণিক যারা মোবাইলের ডকুমেন্ট দেখাতে পেরেছেন, তারা জিডি করতে পেরেছেন। 

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তিন দিনব্যাপী বৃহৎ মাহফিল হয়েছে যশোরে। পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষ সমাগম হয়েছে। এর ভেতরে অসংখ্য মানুষের মোবাইল, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। অনেকেই জিডি করছেন। কয়েকটি চুরির অভিযোগও পেয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

ওসি আরও বলেন, মাহফিলে আহত বা মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মাহফিলে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।মৃত্যু নিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, ১ জানুয়ারি থেকে তিন দিনব্যাপী এই মাহফিল শুরু হয়। মাহফিলের প্রথম দিন বুধবার আলোচনা করেন আল্লামা মামুনুল হক ও আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন আলোচনা করেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হামজা। শেষ দিন শুক্রবার আলোচনা করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh