বরিশালের সব ওষুধের দোকান বন্ধ করে ধর্মঘটের ডাক, ভোগান্তিতে রোগীরা

রাতের আঁধারে বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করেছেন বরিশালের ওষুধ ব্যবসায়ীরা।

আজ রবিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা থেকে মহানগরীর সকল ওষুধ ফার্মেসি বন্ধ করে ধর্মঘট শুরু করেন তারা।

ওষুধ ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনদের। প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় অনেক রোগীর অস্ত্রপচার। এ নিয়ে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ান রোগীদের স্বজনরা।

পরে ভাঙচুরের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল আজম খানসহ বাকিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেয় পুলিশ। পরে রাত পৌনে ৮টার দিকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন ওষুধ ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির বরিশাল জেলার সহ-সভাপতি ও শেবাচিম হাসপাতালের সামনের ওষুধ ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে নগরীর কালীবাড়ি রোডে অবস্থিত কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি কার্যালয়ের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছেন স্থানীয় ইকবাল আজম খান। ইতোপূর্বে বিষয়টি অনেকবার সালিশ-বৈঠকও হয়েছে। মামলাও গড়িয়েছে আদালতে। পরবর্তীতে ওই জমি নিয়ে আর কোনো ঝামেলায় জড়াবেন না বলে লিখিত অঙ্গিকার করেন ইকবাল আজম খান। কিন্তু হঠাৎ করেই শনিবার রাতের আঁধারে কালীবাড়ি রোডে সমিতি কার্যালয়ের দ্বিতল ভবনে হামলা এবং ভাঙচুর করা হয়। ভবনের চারপাশের দেয়াল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সমিতি কার্যালয়ে থাকা কম্পিউটার এবং নগদ টাকাসহ মালামাল লুট করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শনিবার রাতেই এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কোনো ভাবেই মামলা গ্রহণ করেনি। এমনকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের বিষয়েও তাদের কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। তাই সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিবার বিকেল ৫টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফার্মেসি বন্ধ করে ধর্মঘট শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সমিতি কার্যালয় ভাঙচুরের প্রতিবাদে শনিবার বিকেল ৪টার পর থেকে নগরীর সদর রোড, হাসপাতাল রোড এবং বান্দ রোডসহ নগরজুড়ে মাইকিং করে সকল ফার্মেসি বন্ধের আহ্বান জানানো হয় সমিতির পক্ষ থেকে। এরপর বিকেল ৫টার মধ্যে একে একে বন্ধ হয়ে যায় বরিশালের সকল ফার্মেসি। পরে সন্ধ্যার পর ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেন নগরীর সদর রোডে অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বর এবং বান্দ রোডের শেবাচিম হাসপাতালের সামনে। সেখানে সড়কে অবস্থান নিয়ে সমিতি কার্যালয় ভাঙচুরের প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

এদিকে, বরিশালের বেশিরভাগ ফার্মেসি রয়েছে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর রোড এবং জেনারেল হাসপাতালের সামনে (হাসপাতাল রোড)। দুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ওষুধপত্র এসব ফার্মেসি থেকে ক্রয় করে থাকেন স্বজনরা। কিন্তু ফার্মেসিগুলো বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে রোগী এবং স্বজনদের। মুমূর্ষূ রোগীদের জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধ না পেয়ে দিক-বিদিক হয়ে ঘুরেছেন স্বজনরা।

এমনকি রোগীদের জিম্মি করে ফার্মেসি মালিকদের এমন আন্দোলনের প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের স্বজনরা। এসময় বান্দ রোডে অবস্থান নিয়ে অবরোধ এমনকি ফার্মেসি মালিকদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ান তারা।

শেবাচিম হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন নগরীর রূপাতলী এলাকার বাসিন্দা সাব্বির শেখ জানান, তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে। জরুরি সিজারিয়ান অপারেশন করতে হবে বলে ওষুধের একটি তালিকা ধরিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ওষুধ ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের কারণে তালিকা নিয়ে গোটা শহর ঘুরেও ওষুধ কিনতে পারিনি। সরকারি হাসপাতাল হওয়া সত্যেও সিজারিয়ান অপারেশনের ওষুধপত্র সরবরাহ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

শনিবার বিকেল ৫টার দিকে নগরীর কাশিপুর এলাকায় দুর্ঘটনা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন শহিদুল ইসলাম নামের একজন ব্যক্তি। তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকের দেয়া ওষুধের স্লিপ নিয়ে সমস্ত জায়গায় ঘুরেও কোনো ওষুধ পাননি স্বজনরা। পরে হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধের ব্যবস্থা করা হলেও বাকি ওষুধ অন্য রোগীদের কাছ থেকে সরবরাহ করে কোনোভাবে চালিয়ে নেয়া হয় বলে জানান শহিদুলের স্বজনরা।

বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি বরিশাল জেলার জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আব্দুস ছালাম জানান, শনিবার রাতে অভিযুক্ত ইকবাল আজম খান তার লোকজন দিয়ে সমিতি ভবন ভাঙচুর করে। তারা ভবনের দেয়াল থেকে শুরু করে টয়লেট এবং দ্বিতীয়তলার টিনের শেড পর্যন্ত খুলে ফেলেছে। ভবনে লাগানো দরজা-জানালা, এসিসহ সকল মালামাল খুলে এক জায়গায় স্তুপাকারে রেখেছে। নীচতলায় ওষুধের দোকানও ভাঙচুর করেছে। এতে সমিতির কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় তারেক নামের এক শ্রমিককে আটক করা হয়। কিন্তু ঘটনার মূল অভিযুক্ত ইকবাল আজম খানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না। তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় না নিয়ে আসা হলে ওষুধ ব্যবসায়ীরা দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিতে বাধ্য হবে। এ ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানায় অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। তাদের মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। এমনকি মামলার দুই নম্বর আসামিসহ এখন পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধান অভিযুক্তকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন এখনই তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। কিন্তু চাইলেও কী গ্রেপ্তার করা সম্ভব। এজন্য সময়ের প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের আশ্বস্থ করেছি দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার। ব্যবসায়ীরা আমাদের কথায় আশ্বস্থ হয়েছেন। তারা রাত পৌঁনে ৮টার দিকে ধর্মঘট তুলে নিয়ে সকল ওষুধের দোকান খুলে দিয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh