শিশুকে গর্তে পুঁতে অপহরণকারীদের মুক্তিপণ আদায়

এক শিশুকে গর্তে পুঁতে ভিডিও করে টাকা আদায় করেছে অপহরণকারীরা। কক্সবাজারের উখিয়ায় নিখোঁজ রোহিঙ্গা শিশুকে মাটির গর্তে পুঁতে রাখার ভিডিও পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। ভিডিওতে ওই শিশুটি রোহিঙ্গা ভাষায় তার বাবাকে দ্রুত টাকা পরিশোধ করার আকুতি জানান। 

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। ভিডিওটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। 

ভিডিওতে শিশুকে বলতে শোনা যায়, আব্বা তরাতরি চেষ্টা গর। মরে গাতত ঘলায় ফিল্লে। টিয়া দে। (বাবা দ্রুত চেষ্টা কর, আমাকে গর্তে পুঁতে ফেলেছে। টাকা দাও)। 

পুলিশ, রোহিঙ্গা নেতাসহ একাধিক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ সেকেন্ডের এই ভিডিও গত ১০ জানুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়ার অজ্ঞাত স্থানে ধারণ করা হয়। ভিডিওর ওই শিশুটির নাম মোহাম্মদ আরাকান (৬)। তিনি উখিয়ার থাইংখালী-১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-১৫ ব্লকের আবদুর রহমান ও আনোয়ারা বেগমের ছেলে। তিনি গত ৮ জানুয়ারি আরাকান ক্যাম্পের খেলার মাঠ থেকে নিখোঁজ হয়। এরপর ১০ জানুয়ারি তার মা-বাবা এই ভিডিও বার্তা পান। নিখোঁজ আরাকানের সন্ধানে আগেই তার মা-বাবা থানায় জিডি করেছিলেন। ভিডিও দেখার পর তারা নিশ্চিত হন, তাদের ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। 

অপহরণকারীরা আরাকানের মুক্তির জন্য সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণকারীদের কথা অনুসারে দেখিয়ে দেওয়া স্থানে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আসেন আরাকানের স্বজনরা। এতেও আরাকানকে না ছাড়ায় ধারদেনা করে আরো ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেন তারা। এরপর গত ১৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুতুপালং এলাকার এমএসএফ হল্যান্ড হাসপাতালের সামনে শিশুটিকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যায় সন্ত্রাসীরা।

শিশুটির বাবা আবদুর রহমান জানান, গত ৮ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে এপিবিএন অফিসসংলগ্ন খেলার মাঠে খেলতে গিয়ে আর ফেরেনি আরাকান। দুই দিন ধরে আরাকানের সন্ধানে তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে ঘুরেছেন। পুলিশের কাছেও গেছেন। এপিবিএনের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। এরপর গত ১০ জানুয়ারি দুটি মুঠোফোন (০১৭৬-৬৫৭৫৪৬৬ ও ০১৮৯৮-৮২১৪২৯) নম্বর থেকে কল দিয়ে বলা হয়, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ছাড়িয়ে নিতে হলে সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। টাকা না পেলে ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় তারা।

আবদুর রহমান আরো জানান, অপহরণকারীদের দাবি করা টাকা আদায় করতে ছেলেকে মাটিতে পুঁতে রেখে ভিডিও করে। আমার স্ত্রীর কানের দুল বিক্রি করে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা পাঠাই। এরপরও তাকে না ছাড়ায় ক্যাম্পের আত্মীয়স্বজনসহ অন্যান্য লোকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাঠাই। এরপর গত ১৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে এমএসএফ হাসপাতালের সামনে আরাকানকে ফেলে যায় তারা।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন বলেন, শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল। পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh