মেডিকেলের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাসুমা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:২০

মায়ের সঙ্গে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার মাসুমা ও তার মা। ছবি: ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
চার বছর বয়সে বাবাকে হারান মাসুমা। অভাবের সংসারে উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে যায় পরিবারটি। পুরো পরিবারটির নির্ভর হয়ে ওঠে তার মায়ের ওপর। মায়ের টিউশনির আয়ে কোনো মতো চলত তাদের পরিবার। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’ যেন তাদের নিয়মিত জীবনগল্প। নিজের আত্মবিশ্বাস, অভাব-অনটন আর সব দরিদ্রতাকে জয় করে এবারে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন মাসুমা। এমন খবরে খুশির চেয়ে পরিবারটির পিছে তাড়া করছে পড়াশোনার খরচের চিন্তা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের বরুনাগাঁও গ্রামের রহিমা খাতুনের মেয়ে মাসুমা আক্তার হিরা। ৪ বোনের মধ্যে তৃতীয় মাসুমা। পঞ্চগড়ের রহিমুন্নেসা দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিলে জিপিএ-৫ ও ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে এবারে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন যশোর মেডিকেল কলেজে।
স্বামী হারানোর পরে চার মেয়েকে নিয়ে জীবনযুদ্ধ করেছেন মাসুমার মা। অভাব-অনটন, অসচ্ছলতা আর সব ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে চালিয়েছেন জীবন। মায়ের স্বপ্ন পূরণে নিজেও টিউশনি করাতেন মাসুমা। হার না মেনে মা-মেয়ের এমন সফলতায় খুশি প্রতিবেশী ও স্বজনরা। মাসুমাকে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার আহ্বান এলাকাবাসীর।
মাসুমার চাচা হযরত আলী বলেন, ‘মাসুমার কৃতিত্বে আমরা সবাই বিস্মিত। অনেক কষ্ট করেছে মেয়েটি। পড়ালেখার খরচ চালানো অনেক কষ্টের ছিল, তারপরেও হার মানে নাই মাসুমা। আমাদের বংশের নাম উজ্জ্বল করবে সে এটাই আমাদের আশা। এখন তার পড়ালেখার খরচ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখে তাহলে ভালো হয়।’
প্রতিবেশী আশিক ইসলাম জানান, মাসুমার পরিবার অনেক কষ্ট করে চলে। তারা সবাই বোন পুরুষ মানুষ নেই। আমরা দেখেছি- তার মা কষ্ট করে পরিবারের খরচ চালিয়েছে, মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছে। তার সফলতায় আমরা সবাই আনন্দিত।
মেডিকেলে চান্স পাওয়া মাসুমা আক্তার হিরা বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পরে পুরুষবিহীন পরিবারকে নিয়ে নানা কথা বলেছে অনেকে। মায়ের লালিত স্বপ্ন বুকে নিয়ে পথ চলেছি। পড়ার টেবিলে সবসময় রাখতাম ডাক্তারের স্টেথোস্কোপ ও এপ্রোন। পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পরিবারের পাশে থেকেছেন শিক্ষকরাও। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে মানবিক ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আমার।’
মাসুমার মা রহিমা আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পরে পরিবারের হাল ধরেছি। টিউশনের উপার্জনে পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতা না পেয়ে প্রতিবেশীদের কাছে শুনতে হয়েছে নানা কথা। মেয়ের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারি নাই কখনো। তবে আশা ছিল, মেয়ে ডাক্তার হবে। সব বাধা পেরিয়ে মেয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সরকার পাশে থাকলে আমার মেয়ে একদিন মানবিক ডাক্তার হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা মাসুমার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে সবসময় ছিল ও থাকবে। আমরা মাসুমার ভর্তির বিষয়ে সহযোগিতা করব। সেই সঙ্গে তার সবরকম খোঁজ-খবর রাখব।’