পুকুর, দিঘি, ডাস্টবিনে মিলছে একের পর এক লাশের খণ্ড

বরিশাল নগরীর কাশিপুর এলাকায় একের পর এক মিলছে মানুষের শরীরের খণ্ডিত অংশ। কখনো দিঘি, আবার কখনো পুকুর, কখনো আবার ময়লার ডাস্টবিনে মিলছে অংশগুলো।

পুলিশ জানিয়েছে, গত তিনদিনে হাত-পা এবং কলিজাসহ শরীরের সাতটি খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করেছেন তারা। সবশেষ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরেও ওই এলাকার হাতেম আলী মীরার সেই দিঘি থেকে হাতের কব্জি উদ্ধার করা হয়।

কিন্তু গত তিন দিনে পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা, আর সন্দেহভাজনদের ঘরে তল্লাশি ছাড়া তদন্তে আর কোনো সফলতা নেই পুলিশের। 

কেননা বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার চারটি থানায় নিখোঁজ দাবি করে কোনো জিডি হয়নি। এমনকি নিখোঁজের অভিযোগ নিয়েও আসেনি কেউ। তার ওপর উদ্ধার হওয়া শরীরের অংশগুলো পচন ধরায় ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের বিষয়টিও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে খণ্ডিত অংশগুলো যারই হোক, তাকে পরিকল্পিতভাবে এবং ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে বলে মনে করছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। আর যিনি খুন করেছে তিনি কোনো পেশাদার অপরাধী হতে পারে বলে ধারণা এই কর্মকর্তার।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত রবিবার সকালে নগরীর কাশিপুর উত্তর ইছাকাঠী হাতেম মীরার দিঘি ও পার্শ্ববর্তী পুকুর থেকে মানুষের কাটা দুই হাতের ও এক পায়ের অংশ এবং কলিজাসহ শরীরের পাঁচটি অংশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরদিন সোমবার বিকেলে একই স্থানে দিঘির পাশে ময়লার ডাস্টবিনে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায় হাতের খণ্ডিত আরেকটি অংশ। সবশেষ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে দিঘিতে ভাসমান পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায় একটি হাতের কব্জির অংশ। একের পর এক শরীরের খণ্ড উদ্ধারের ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সোমবার বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানায় অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। থানার উপ-পরিদর্শক মো. আবুল হোসাইন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

পাশাপাশি ঘটনার রহস্যে পৌঁছাতে ঘটনাস্থল হতে আশপাশের এলাকার সন্দেহজনক ব্যক্তিদের বাড়ি-ঘরে তল্লাশি করেছে পুলিশ। মেট্রোপলিটন পুলিশের চারটি থানা এলাকায় কেউ নিখোঁজ রয়েছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছে পুলিশ। কিন্তু কোথাও কিছু খুঁজে পায়নি তারা।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ জাকির শিকদার বলেন, শরীরের বাকি অংশগুলো পাওয়া যায় কিনা সে জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে কাজ করছে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সবশেষ মঙ্গলবার হাতের কবজির অংশ পাওয়া গেছে। এটা দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি কোনো মেয়ের হবে। মেয়েটির বয়স ১২-১৭ বছরের মধ্যে হতে পারে। ভেবে ছিলাম হাত যখন পেয়েছি, পরিচয়ও খুঁজে পাবো। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না।

এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া হাতের অংশ এমনভাবে পচে গেছে যে কোনোভাবেই পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন মাথার অংশ বা শরীরের মূল অংশ পেলে পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। এ বিষয়ে আমাদের তৎপরতা থেমে নেই। ঘটনার নেপথ্যে পৌঁছাতে মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি, পিবিআইসহ আমাদের একাধিক গোয়েন্দা টিম কাজ করছে। দেশের প্রতিটি থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছে। এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

নগর পুলিশ প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ড যেই করেছে তিনি খুব ঠান্ডা মাথায় এবং পরিকল্পিতভাবে করেছে। তিনি পেশাদার খুনি হবে। কেননা হত্যাকাণ্ডের পর শরীরের অংশগুলো ফ্রিজিং করা হয়েছে। পরে সুযোগ বুঝে লাশ গুম করতে শরীরের অংশগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দেয়া হয়। এটি কোনো স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ধারণা করা হচ্ছে হত্যাকাণ্ডটি মহানগরী এলাকায় নয়, বরিশালের বাইরে কোথাও হবে। কারণ আমাদের চারটি থানায় খোঁজ নিয়ে দেখেছি মেট্রোপলিটন এলাকায় কোনো নিখোঁজের ডায়রি এমনকি অভিযোগ নিয়েও কেউ আসেনি। বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh