হাফ ভাড়া দেয়ায় শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত এবং হেনস্তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাস শ্রমিকদের হামলার শিকার হয়েছে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা এবং সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বরিশাল-পটুয়াখালী-ঝালকাঠি মহাসড়কের গোলচত্বরে টায়ার জালিয়ে সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় সংশ্লিষ্ট বাসটি ভাঙচুর করা হয়। পরে হামলাকারীদের বিচারসহ ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ফলে সন্ধ্যা ৬টার পর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা, পাথরঘাটা, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, বরগুনাসহ চার জেলার সকাল রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের।
খবর পেয়ে বিএম কলেজ অধ্যক্ষ, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বাস মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে রাত সোয়া ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়।
হামলার শিকার বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজের ইতিহাস তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাহান হাসান রাফি বলেন, আমাদের বিএম কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লিপি আক্তার রাজাপুর থেকে ‘তওহীদ পরিবহন’ (বরিশাল মেট্রো- ব- ১১-০২০৯) নামের একটি বাসে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা করে।
তিনি বলেন, বাসে ওঠার সময় কাউন্টারে কলেজের পরিচয়পত্র দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া রাখতে বলেন লিপি। কিন্তু কাউন্টার থেকে হাফ ভাড়া নিতে রাজি হয়নি। উল্টো মজিবর রহমান নামের একজন রাজাপুর কাউন্টারে বসে শিক্ষার্থী লিপি আক্তারকে অকথ্য ভাষায় গালাল করে। এতে তিনি কান্না করে দেয়।
শুধু তাই নয়, বাসে সিট খালি থাকলেও লিপিকে সমস্ত পথ দাঁড় করিয়ে বরিশালে নিয়ে আসে। বাসের মধ্যেও তাকে হেনস্তা করে। বিষয়টি তিনি বাসের মধ্যে বসেই ফোন করে আমাদের জানান। আমরা রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে আমাদের বোনের সাথে এমন আচারণ করার কারণ জানতে চাই চালকের কাছে।
ঠিক সেই মুহূর্তে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থাকা বাস মালিক এবং শ্রমিকরা এক সঙ্গে এসে ডাকাত ডাকাত বলে আমাদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা করে। পিটিয়ে আমিসহ অন্তত ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীকে আহত করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিএম কলেজের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান বলেন, দেশের যেকোনো প্রান্তে শিক্ষার্থীদের জন্য বাসে হাফ ভাড়া নেয়ার নিয়ম রয়েছে। হাফ ভাড়া দিতে চাওয়ায় আজ আমার বোনকে খুব বাজেভাবে হেনস্তা করে বাসের হেলালপার, সুপারভাইজার এবং চালক। আমরা এর কারণ জানার জন্য রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলাম। অথচ বাসের উৎশৃঙ্খল এবং মাদকাসক্ত শ্রমিকরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না। সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভসহ আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, আন্দোলন চলাকালে চার দফা দাবি পেশ করেন বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী এবং কলেজ ছাত্রীকে হেনস্তকারী শ্রমিকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। হামলার ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র প্রদর্শনপূর্বক দেশের সকল রুটের বাসে হাফ ভাড়া বাস্তবায়ন করতে হবে, এবং তা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর করতে হবে। আগামী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা এবং হামলার ঘটনা ঘটালে বাসের রুট পারমিট বাতিল করতে হবে।
কোনো অনির্বাচিত নেতৃত্ব দিয়ে বাস মালিক সমিতি চলবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে বাস মালিক সমিতির কমিটির হাতে নেতৃত্ব দিতে হবে। প্রশিক্ষিত চালক, সুপারভাইজার এবং হেলপার দিয়ে বাস চালানোর পাশাপাশি আধুনিক যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, বাস মালিক এবং শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, লিপি নামের ওই ছাত্রী ভাড়া না দিয়ে বাসে যাত্রা করার কথা বলে। এ নিয়ে ওই ছাত্রীর সাথে বাসের সুপারভাইজারের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে শিক্ষার্থী তার সহপাঠিদের খবর দিয়ে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আসে।
এক পর্যায় বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট বাসসহ চালককে রূপাতলী থেকে ধরে তাদের ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন শ্রমিকরা বাস চালককে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় হামলার ঘটনা ঘটে। এতে রূপাতলী থেকে পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, বরগুনা, খুলনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের।
খবর পেয়ে ঘটনস্থলে ছুটে যান সেনাবাহিনী এবং পুলিশের একাধিক টিম। এমনকি বিএম কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শেখ মো. তাজুল ইসলামসহ অন্যান্য শিক্ষকমন্ডলী ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিবৃত করার চেষ্টা করে। তবে দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন শিক্ষার্থীরা। রাত পৌনে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রূপাতলীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে।
কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থী এবং বাস শ্রমিকদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর বাস শ্রমিকরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এজন্য শিক্ষার্থী বাস ভাঙচুর এবং সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের মধ্যস্ততায় শিক্ষার্থী, বাস মালিক-শ্রমিক এবং কলেজ প্রশাসনের উপস্থিতি বৈঠক হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে তারা রাত পৌনে ৯টার দিকে অবরোধ তুলে নিয়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh