Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

কলেজ পায়নি বহু মেধাবী

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:০৪

কলেজ পায়নি বহু মেধাবী

পছন্দের কলেজ না পাওয়ায় অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেনি দুই হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী। তৃতীয় ধাপের মেধা তালিকাতেও কোনো কলেজে নির্বাচিত হতে পারেননি তারা। তবে আবেদন করেও বেশকিছু শিক্ষার্থী কলেজ পায়নি ও কলেজ পেয়েও কেউ কেউ ভর্তি হয়নি, এই সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি।

ভর্তির জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ায় সন্তানের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। অনেক বড় কলেজে বারবার চয়েজ দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ।  

শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, একাদশ শ্রেণির ভর্তির তিন ধাপে সারাদেশে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার নিশ্চয়ন করা শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম ধাপে ১২ লাখ ৭৩ হাজারের মধ্যে প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী নির্বাচিত কলেজ পেয়েও ভর্তি নিশ্চিত করেনি। দ্বিতীয় ধাপে ৩ লাখ ১৮ হাজারের মধ্যে ২ লাখ ৩৭ হাজার এবং তৃতীয় ধাপে এক লাখ ১২ হাজারের মধ্যে এক লাখ এক হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত করেছে। গত বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাস করে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী।

তার মধ্যে জিপিএ-৫ পায় আড়াই লাখের বেশি। প্রতি বছর প্রায় এক লাখ অনিয়মিত (পিছিয়ে পড়া, এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করা) শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ভর্তি আলাদা হলেও এ স্তরে এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর সংখ্যা। সেই হিসেবে এবার প্রায় ৫ লাখ কম শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে কম ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী এসএসসি পাসের পর ঝরে গেছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ভর্তিচ্ছুদের চয়েস অর্ডারে সমস্যা ছিল। ১০টি কলেজ চয়েস দেওয়ার সুযোগ থাকলেও অনেকেই মাত্র পাঁচটি দিয়েছেন। নম্বর কম হলেও কেউ কেউ টপ অর্ডারের পাঁচটি কলেজ চয়েস দিয়েছেন অথচ সেই কলেজগুলোর জন্য তাদের নম্বর নেই। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, একজন ছাত্র প্রথম চয়েস দিয়েছেন ঢাকা কলেজ, তারপর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট, তারপর রাজউক উত্তরা মডেল ও রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ। এমন চয়েস যারা দিয়েছেন তারাই বাদ পড়েছেন। 

অধ্যাপক নেহাল আরও বলেন, প্রথম ধাপে নির্বাচিতদের মধ্যে অনেকেই মিশনারি পরিচালিত নটর ডেম, হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ ও সেন্ট গ্রেগরিজ কলেজে সুযোগ পেয়ে ভর্তিও হয়েছেন। এই চার কলেজ ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। বাকি সব কলেজ ও মাদ্রাসায় ভর্তি পরীক্ষা না হয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির তিন ধাপে সারাদেশে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত করেছে। গত বছর সাড়ে ১৭ লাখ পরীক্ষার্থী এসএসসি পাস করলেও তিন লক্ষাধিক শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে। এর একটি অংশ কারিগরিতে, বিদেশে পড়ালেখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি হয়। তার ওপর অনলাইন আবেদন কার্যক্রম শেষ, আবেদন করেও প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী এ আওতার বাইরে রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পেয়েও ২ হাজার ৮০০ জন রয়েছে, যারা কোনো কলেজ পায়নি। 

দফায় দফায় আবেদন করেও পছন্দের কলেজ না পাওয়ায় অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। সে কারণে কেউ কেউ শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ নিয়ে ছুটে আসছেন। ফেব্রুয়ারির শুরুতে চতুর্থ ধাপের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে। এতে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজ না পেলেও সরকারের অনুমোদিত আসন শূন্য থাকা কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়া ২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী আবেদন করেও ভর্তির বাইরে রয়েছে। অনেক বড় কলেজে বারবার চয়েজ দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কোনো কলেজ খারাপ নয়। পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রতি মনোযোগী হলেই সেই শিক্ষার্থী ভালো ফল করবে। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সফটওয়্যারে আবেদনকারীর কলেজ নির্বাচন করে থাকে। তাই এখানে ভুল হওয়ার সুযোগ নেই। ভর্তি হতে না পেরে কিছু অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। তাদের জন্য নতুন করে সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জিপিএ-৫ পেয়ে তিন ধাপে আবেদন করেও পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পাননি মুসফিক হাসান। পড়ালেখা চালিয়ে যেতে এ শিক্ষার্থী মাকে নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এসেছেন। মুসফিক বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়ার পর কলেজ ভর্তিতে সেটির মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তিন ধাপে অনলাইনে আবেদন করেও কলেজ নির্বাচন হয়নি। ভালো কলেজে যদি ভর্তির সুযোগ না পাই তবে ভালো ফল করে কী লাভ হয়েছে- এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তিন ধাপের আবেদন শেষ হয়েছে। এখন নতুন করে আর ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে কি না তা জানতে এসেছি। কেন আমি তিন দফায় কলেজ পেলাম না সেটি অনেকের কাছে জানতে চাইলেও কেউ উত্তর দিতে পারছেন না।

জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তিতে প্রথম ধাপে গত ৮ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইন আবেদন চলে। দ্বিতীয় ধাপে ৯-১০ জানুয়ারি, ফল প্রকাশ ১২ জানুয়ারি ও নিশ্চয়ন চলে ১৩ থেকে ১৪ জানুয়ারি। তৃতীয় ধাপের আবেদন ১৬ জানুয়ারি ও ফল ১৮ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। এ ধাপের নিশ্চয়ন চলে ১৯ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। তিন ধাপে যারা নিশ্চয়ন করেছে তাদের ২২ থেকে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে ভর্তি হয়েছে। ক্লাস শুরু হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫