Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

কিন্ডারগার্টেনের লাগাম টানবে সরকার

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৬

কিন্ডারগার্টেনের লাগাম টানবে সরকার

কিন্ডারগার্টেন। ছবি: সংগৃহীত

সারা দেশে চাহিদার তুলনায় মানসম্মত সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতার কারণে বেসরকারি পর্যায়ে যত্রতত্র কিন্ডারগার্টেন স্কুল চালু হয়েছে। বাসস্থানের নিকটবর্তী হওয়ায় শিশুদের যাতায়াতের সুবিধা এবং নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে অনেক অভিভাবকই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সন্তানকে এসব কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করান।

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা বিষয়ে সরকারি কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এবং ব্যক্তিবিশেষের মর্জিমাফিকে এসব স্কুল পরিচালিত হতে দেখা যায়। বই পড়াচ্ছে নিজেদের মতো। ফলে বাস্তবায়ন হচ্ছে না সরকারের একমুখী শিক্ষা নীতি। 

এবার দেশে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গড়ে তোলা প্রাক-প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুলগুলোর লাগাম টানবে মন্ত্রণালয়। সব স্কুলকে এক ছাতার নিচে আনতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া এসব স্কুলের প্রাথমিক অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করতে পূর্বের নীতিমালা কিছুটা সংশোধন আনতে একটি সাব-কমিটি করা হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, অনুমোদন না নিয়েই অনেক কেজি স্কুল চলছে। এসব স্কুল শিশুদের কাঁধে ইচ্ছামতো বইয়ের বোঝা তুলে দিচ্ছে। শিশুদের শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে স্কুলগুলোকে অনুমোদনের আওতায় আনতে নীতিমালা করা হয়।

তিনি বলেন, এ নীতিমালার শর্ত আরও সহজ করতে কিছুটা সংশোধন করে সেটি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। ইতোমধেই নীতিমালা সংশোধনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এ মাসেই একটি সংশোধনী পাওয়া যাবে। 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে সাড়ে তিনশটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল অনুমোদন পেলেও গজিয়ে উঠেছে হাজার হাজার। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ছোট পরিসরে শুরু করলেও এখন স্কুল অ্যান্ড কলেজ নাম দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। বিশেষত শহরাঞ্চল ও মহানগরগুলোতে বেশি কিন্ডারগার্টেন চালু হয়েছে। বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি এসব কিন্ডারগার্টেনের কোনো কোনোটি ইংরেজি মাধ্যমও চালু করেছে। সেখানে প্লে-গ্রুপ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে। 

অথচ অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানেরই সর্বোচ্চ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর কথা। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠান পাড়া-মহল্লায় চটকদার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আসছে। এসব বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে অভিভাবকরাও তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তুলে দিচ্ছেন কিন্ডারগার্টেনগুলোর সংশ্লিষ্টদের হাতে। অস্বাস্থ্যকর ঘিঞ্জি পরিবেশে চলছে ক্লাস-পরীক্ষা। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষকও। যারা এসব কিন্ডারগার্টেনে পাঠদান করছেন, তাদের অধিকাংশই আবার কলেজপড়ুয়া। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা বলে দিনের পর দিন তাদের দিয়েই চলছে ক্লাস-পরীক্ষা।

এ বিষয়ে সংশোধিত নীতিমালার খসড়া চলতি মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। পরে এটি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানিয়েছে সূত্র।

এদিকে কেজি স্কুলের বর্তমান অনুমোদন নীতিমালার মধ্যে রয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উপ-পরিচালক বরাবর আবেদন করা হলে তিনি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন ডিপিইতে পাঠাবেন। পরে প্রতিবেদন ইতিবাচক হলে ২২টি শর্ত জুড়ে এক বছরের জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দেয় অধিদপ্তর। এক বছর পর আবারও সমান শর্তে তিন বছরের জন্য অস্থায়ী নিবন্ধন দেওয়া হয়। এ সময় শেষে স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ আগের একই শর্তে পাঁচ বছরের জন্য স্থায়ী নিবন্ধন দেওয়া হয়। এরপর থেকে শুধু নিবন্ধন নবায়ন করতে হয়।

২২ শর্তে রয়েছে

অনুমোদন নীতিমালাগুলোর শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো- ১. বিদ্যালয়ে পানির ব্যবস্থা, ২. সরকারের কাছে আর্থিক সুবিধা দাবি না করা, ৩. নিয়মিত অ্যাসেম্বলি ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন, ৪. কমিটি গঠন, ৫. এনসিটিবির বই পড়ানো, ৬. জাতীয় দিবস পালন, ৭. ভর্তি-বেতনে সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ, ৮. শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ, ৯. ল্যাব-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, ১০. তহবিল গঠন, ১১. শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের তথ্য থানায় সরবরাহ, ১২. নিজস্ব বা তিন হাজার স্কয়ার ফুটের ভাড়া বাসা, ১৩. ঢাকা মহানগরের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা জামানত, মহানগরের জামানত কম হলেও ক্যাম্পাসের জমি বেশি হতে হয়। 

বর্তমানে প্রাথমিক অনুমোদন প্রক্রিয়ায় জটিলতার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মিজানুর রহমান জানান, ২০১৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক কেজি স্কুল নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। 

তিনি বলেন, বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন গেলে নানা ত্রুটি দেখিয়ে ফাইল ফেরত পাঠানো হয়। এর ফলে সম্প্রতি এ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এ প্রক্রিয়াটি জটিল হওয়ায় কেউ এর আওতায় আসতে চাচ্ছে না। এছাড়া আবেদনকারীরা নিরুৎসাহী হয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে অধিদপ্তরের ১২তম সভায় প্রাথমিক অনুমোদনের জন্য ৫৯৮টি আবেদন তোলা হয়। সেখান থেকে ২৬৩টি আবেদনে সম্মতি দেওয়া হয়। এছাড়া ৩৩৫টি আবেদন বাতিল করা হয়। ফেরত দেওয়া আবেদনগুলো পুনরায় সংশোধন করে পাঠাতে নির্দেশ দেয় অনুমোদন কমিটি। 

এ বিষয়ে ডিপিইর মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, কেজি স্কুলগুলো সরকারের আওতাভুক্ত করতে কাজ শুরু করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠালে আগের নীতিমালাটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

তিনি আরও বলেন, সব কেজি স্কুলে নতুন পাঠ্যক্রমের বই পড়ানো হবে। এ স্কুল মনিটরিং বাড়াতে সহজ শর্তের মাধ্যমে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়ে আনা হবে সরকারের আওতায়। এ লক্ষ্যে আগের নীতিমালায় জুড়ে দেওয়া শর্তগুলো পরিবর্তন করে সহজীকরণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫