Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা

যে কারণে কমল পাসের হার

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:২১

যে কারণে কমল পাসের হার

একজনও পাস করেননি, এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০টি। ছবি: সংগৃহীত

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় একজনও পাস করেননি, এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গত বছর ছিল পাঁচটি। কিন্তু এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০ গুণ বেড়ে হয়েছে ৫০টি।

এ ছাড়া ২০২২ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- পরীক্ষায় সারা দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে মোট ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সারা দেশে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন।

এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। ২০২১ সালে আবশ্যিক বিষয় বাদ দিয়ে মাত্র তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। তখন উল্লম্ফন হয়েছিল পরীক্ষার ফলাফলেও। কিন্তু ২০২২ সালে ছয়টি বিষয়ের ১২টি পত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয় এইচএসসিতে।

এতেই পাশের হার কমে গেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। সে হিসাবে পরীক্ষার বিষয় বেড়ে যাওয়ার ফলে কমে গেছে পাসের হার। এ ছাড়াও ২০২১ সালের তুলনায় পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার পাশাপাশি পাসের সংখ্যা, পাসের হার, জিপিএ-৫ প্রাপ্তি কমেছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নম্বর ও সময় কমিয়ে এইচএসসি ও সমমানে পরীক্ষা নেওয়া হয়।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, গত বছর মাত্র তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছিল সংক্ষিপ্তভাবে। তখন বেশিরভাগই ভালো করেছিলেন। সে জন্য পাসের হারও ছিল প্রায় ৯৫ শতাংশ। এবার ১২টি পত্রে পরীক্ষা হয়েছে, তাতে সবাই তত ভালো করতে পারেননি। সে জন্য শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত নয়।

অল্প কয়েকটি এমপিওভুক্ত ( বেতন-ভাতা বাবদ সরকার থেকে অনুদানপ্রাপ্ত)। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তথ্য চাওয়া হয়েছিল। তারা পাঠিয়েছে। এখন মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে কর্মশালা করা হবে। সেখানে অভিজ্ঞ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের রাখা হবে, অভিজ্ঞতা জানানোর জন্য। এইচএসসি পরীক্ষাতেও এমন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একইভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২০২২ সালে ছয়টি বিষয়ে ১২টি পত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয় এইচএসসিতে। দেখা গেছে, ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কমে পাস করেছে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছরে বাংলা, ইংরেজি, নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয় ও চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে এইচএসসিতে। কিন্তু ২০২১ সালে বাংলা ইংরেজি ও চতুর্থ বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০২২ সালের ফলাফলে সব শিক্ষা বোর্ডেই ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার তুলনামূলক কমে গেছে। যা সার্বিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা না নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল দেওয়া হয়েছে।

এবারের ফল বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮ লাখ ১৭ হাজার ২৩০ জন, পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৫ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে আলিমে সারা দেশে ৯০ হাজার ২৬৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮৩ হাজার ৫৫৩ জন, পাসের হার ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৪২৩ জন। কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৮৩ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ লাখ ১১ হাজার ২০৪ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ১০৪ জন। বিদেশের আটটি কেন্দ্র থেকে ২২৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২১৮ জন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবার ৯ হাজার ১৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া এবার শূন্য পাসের বাইরেও ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাসের হার ৫ শতাংশের মধ্যে। ১০টিতে পাসের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। ৪৫টিতে পাসের হার ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে। ৫১৯টিতে পাসের হার ২০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে। ৭ হাজার ১৭৮টিতে পাসের হার ৫০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে। আর ১ হাজার ৩৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সব শিক্ষার্থীই পাস করেছেন। ২০২১ সালের পরীক্ষায় এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ১ হাজার ৯৩৪টি। 

শূন্য পাস করা কলেজের একটি হলো মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আফরোজা রমজান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এখান থেকে ৪ জন পরীক্ষা দিলেও কেউ পাস করেননি। জেলা শহরের শহীদ রফিক সড়কের পাশে কলেজটির অবস্থান। মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলীর স্ত্রীর নামে এটির নামকরণ হয়েছে। কলেজটি এমপিওভুক্ত (বেতন বাবদ সরকারি অনুদান পায় না) নয়। জানা যায়, শূন্য পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত নামকাওয়াস্তে চলছে। ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধাও কম। বেশিরভাগ কলেজেই পরীক্ষার্থী ছিলেন অল্প কয়েকজন। এমনকি কোনো কোনো কলেজ থেকে মাত্র একজন পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

অভিযোগ আছে, এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘নানাভাবে’ পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি পেয়ে যায়। কিন্তু সেগুলো পরে আর শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে তদারক করা হয় না। তখন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের খেয়ালখুশিমতো চলে। অন্যদিকে অনেকেই ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি বা নামের জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কিন্তু কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার, সে বিষয়ে তারা মনোযোগী হন না।

এর আগেও বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় এ রকম কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। যেমন গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাতেও ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করেনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫