ঠিকাদারের সাথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের টাকা লেনদেন সংক্রান্ত ‘ফোনালাপ’ ফাঁস হয়েছে। যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ‘সাথী খাতুন’ নামক ফেসবুক আইডি থেকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানের নামে ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ পোস্ট করা হয়।

এতে মঈন নামের এক ঠিকাদারের সাথে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত কথা বলতে শোনা যায় তাকে। তবে ফোনালাপটি সুপার ইডিটেড বলে দাবি করেছেন আলী হাসান।

অডিওতে ৪টি ফোনালাপ সংযুক্ত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রথম কল রেকর্ডে ঐ ঠিকাদার বলেন, “স্যার আজকে ওটা জমা দিয়ে দিলাম, কালকে ওই টাকাটা ক্যাশ হবে। তো টাকাটা কোথায়, কখন প্রেস করবো আমাকে বললে আমি সেইভাবে প্রিপারেশন নিয়ে নিতাম।” 

এসময় আলী হাসান ৩টার সময় কুষ্টিয়া এসে টাকা দিতে বলেন। এরপর ঠিকাদার বলেন, “টোটাল ৪ লাখ টাকাই আমি সাড়ে চারটার মধ্যে পাব, সাড়ে ৫টার মধ্যে আমি আপনাকে দিতে পারবো।” 

এসময় রেজিস্ট্রার বলেন, “ফোনে এগুলো বলার দরকার নাই”।

দ্বিতীয় ফোনালাপে ঠিকাদার রেজিস্ট্রারকে বলেন, “ওটা (টাকা) ৪টার দিকে মনে হয় পাবেন।” তখন তিনি আবারো অর্থ লেনদেনের বিষয়টি ফোনে না বলার ব্যাপারে সতর্ক করেন।

এছাড়া তৃতীয় ফোনালাপে টাকার বিষয়ে কাজ হয়েছে কিনা ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসা করেন রেজিস্ট্রার। তখন ঠিকাদার জানান, তিনি এখনও ব্যাংকে আছেন, কাজ শেষ হলেই তাকে (রেজিস্ট্রার) জানাবেন।

আরেকটি ফোনালাপে রেজিস্ট্রার ঠিকাদারের কাছে টাকার অবস্থা এবং আর কতক্ষণ লাগবে তা জানতে চান। এসময় ঠিকাদার আরও আধা ঘণ্টার মতো লাগবে জানিয়ে রেজিস্ট্রারকে কোথাও বসে চা খেয়ে একটু অপেক্ষা করতে বলেন।

এসময় ব্যাংক বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে বলে ঠিকাদারকে তাগিদ দেন রেজিস্ট্রার। পরে শেষ ফোনালাপে রেজিস্ট্রার ঠিকাদারের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনি অল্প একটু অপেক্ষা করেন, আসতেছি। ব্যাগে ভরতেছি (টাকা), প্লিজ একটু রাখেন।”

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি এটিএম এমদাদুল আলম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি কখনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।”

এদিকে অডিওটি ‘নিজের না’ বলে দাবি করে ইবি থানায় জিডি করেছেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান। তাতে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক পদে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ঠিকাদারদের সাথে প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের স্বার্থে নির্মাণকাজে জড়িত লোকের সাথে আমাকে কথা বলতে হয়েছে। কিন্তু ভাইরাল হওয়া অডিও’র এ ধরনের কোন আর্থিক লেনদেনের আলাপ প্রকল্প পরিচালক এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগে থাকা অবস্থায় হয়নি।”

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালামের কণ্ঠের মতো একাধিক ফোনালাপ ফাঁস হয়। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

একইসঙ্গে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের রেজিস্ট্রারের মতো কণ্ঠস্বরের আরেকটি ফোনালাপ ফাঁস হলো।