Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে পাবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

Icon

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:০৩

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে পাবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রশিবির সন্দেহ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সাধারণ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পর পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে ছাত্রলীগ ও পাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ। এসময় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।

গতকাল মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলে এ ঘটনা ঘটে। 

এদিকে ঘটনার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শাখা ছাত্রলীগ ও পুলিশ কেউ দায় নিচ্ছে না।

ছাত্রলীগ ও পাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ দাবি- তাদেরকে কোনও প্রকার নির্যাতন করা হয়নি। সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। সেসময় তাদের শরীরে আঘাতে কোনও চিহ্ন ছিল না।

আর পুলিশের দাবি- শিক্ষার্থীদের আহতবস্থায়ই উদ্ধার করা হয়েছে।

নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা হলেন- লোক প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের গোলাম রহমান জয়, ইংরেজী বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আসাদুল ইসলাম এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল হক। তাদের পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আসাদুল ইসলাম ও আজিজুল হককে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানায় নেওয়া হয়েছে, আর গোলাম রহমানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে হাসপাতালে পুলিশী পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারাবির নামাজের পর ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আড্ডা দিচ্ছিল। এসময় ছাত্রলীগ কর্মী আপেল, শেহজাদ, তোফিকসহ ১০-১২ জন তাদের কাছে এসে শিবির কিনা জানতে চান। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শহীদ মিনার থেকে হলে নিয়ে যান। এসময় হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের তিনটি রুমে নিয়ে স্ট্যাম্প, রড, হকিস্টিক, প্লাসসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নির্যাতন করেন। হাতুড়ি, জিআই পাইপ, তালা দিয়েও মারধর করেন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়য়ে স্বীকারোক্তি নিয়ে পর পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।

আহত তিন শিক্ষার্থীরা বলেন, তারাবির নামাজ শেষে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এসময় হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের দাঁড়ি-টুপি থাকায় তারা আমাদের বিভিন্ন ট্রেট দিচ্ছিলেন। পরে আমাদের হলে নিয়ে গিয়ে তিন রুমে তিনজনকে নির্যাতন করা হয়। আমরা শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত না, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী। আমাদের অপরাধ আমরা নামাজ-রোজা করি, দাঁড়ি-টুপি আছে।

এ বিষয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, বেশ কয়েকজন শিবিরকর্মী ক্যাম্পাসে গোপন বৈঠক করছিল। এসময় তাদের আটক করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে আমরা তাদের উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। তাদের কোনও ধরনের মারধর করা হয়নি। সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। নির্যাতনের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ যদি ব্যবস্থা নেয়, তাহলে নিতে পারে, আমাদের কোনও অভিযোগ নেই।

একই সূর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা নাজমুল হোসেনের। তিনি বলেন, প্রক্টর ড. কামাল হোসেনের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমি ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। পরে ওই শিক্ষার্থীদের আটক অবস্থায় দেখি। তাদের কাছে থেকে শিবিরের রিপোর্ট বই, ব্যক্তিগত ডাইরি এবং কিছু মোবাইল ও সিম উদ্ধার করা হয়। পুলিশের কাছে সোপর্দের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদেরকে কোনও নির্যাতন করা হয়নি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ডা. মো. ওমর ফারুক বলেন, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার ফোন পেয়ে হলে এসে ওই শিক্ষার্থীদেরকে দেখতে পাই। তারা আমার হলেও শিক্ষার্থী নয়, ক্যাম্পাসের বাহিরে থাকে। তারা নিজেরা শিবির বলে স্বীকারোক্তি দিলে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এ বিষয়ে পাবনা পুলিশ সুপার (এসপি) আকবর আলী মুনসী বলেন, খবর পেয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। আর নির্যাতিতরা যদি অভিযোগ দেয়, তাহলে তদন্ত করে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

এদিকে বুধবার (৫ এপ্রিল) সকালে শাওন নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং (ইউআরপি) বিভাগের ১২তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাকেও শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসের বাহিরে নিয়ে গেছে বলে একাধিক সূত্র জানায়।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, শাওন বাসে বাড়ির (ঝিনাইদহ) পথে আছে। তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, সে ঠিক আছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫