
শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ছবি: সংগৃহীত
দেশে সরকারি পদের সংখ্যা ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৫২টি। এর মধ্যে শূন্যপদ আছে তিন লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, দপ্তর ও সংস্থায় পদ আছে ৪৯ হাজার ২৩৫টি।
কিন্তু এর মধ্যে ১৩ হাজার ৩৯৯টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থায় পদ শূন্য আছে ৪৪ হাজার ৮২০টি। এর বেশিরভাগই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও রয়েছে শিক্ষক সংকট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে লাখ লাখ বেকার তরুণ চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন অথবা আদম পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে ভাগ্যান্বেষণে বিদেশে গিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন, তখন সাড়ে তিন লাখের বেশি সরকারি পদ শূন্য থাকা কেবল অস্বাভাবিক নয়, অমার্জনীয়ও।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উল্লিখিত শূন্যপদের সবই সরকারি প্রতিষ্ঠানে। এর বাইরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৭০ হাজার শিক্ষক ও কর্মচারীর পদ শূন্য আছে। জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ হয়। কিন্তু সম্প্রতি চতুর্থ শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে অন্তত অর্ধেক পদে প্রার্থীই পাওয়া যায়নি। মূলত যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসব পদে নিয়োগ দেওয়া যায়নি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের সচিবসভায় শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এত পদ শূন্য থাকায় প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। শূন্যপদ পূরণে প্রত্যেক সচিবকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কয়েক দফা চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এরপরও নানা জটিলতায় শূন্য রয়েছে এসব পদ। করোনা মহামারিতে নিয়োগপ্রক্রিয়া থেমে থাকায় চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি করে দ্রুত শূন্যপদ পূরণের নির্দেশনা দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের শূন্যপদগুলো পূরণ হয়নি। দেশে সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি খাত বেকারের সংখ্যা আরও বাড়িয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) হিসাবে, করোনার কারণে বাংলাদেশে চাকরি হারিয়েছেন অন্তত দেড় কোটি মানুষ।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শূন্যপদ পূরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ দেশে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। একটি পদের বিপরীতে হাজার হাজার প্রার্থী আবেদন করছেন। তাই শূন্যপদগুলোতে দ্রুত চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনায় নিয়োগপ্রক্রিয়া থেমে থাকায় চাকরিপ্রার্থীদের চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক শূন্যপদ পূরণ হয়েছে। আশা করি, দ্রæত সরকারি শূন্যপদ পূরণ হয়ে যাবে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, সরকারি কলেজে বিসিএসের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। সর্বশেষ ৪০তম বিসিএসে নিয়োগ পেয়েছেন কিছু। এখন ৪১তম বিসিএসে আরও ৯শর মতো নিয়োগ পেতে পারে। এ ছাড়া আরও দু-তিনটি বিসিএস প্রক্রিয়াধীন আছে।
তবে প্রতিদিনই অবসর-পদত্যাগ-মৃত্যুজনিত কারণে পদ শূন্য হচ্ছে। সুতরাং বড় আকারে বা বিশেষ বিসিএস না হলে এসব পদ পূরণ হবে না। আর সরকারি হাইস্কুলে নিয়োগের জন্য সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে লেখা হয়েছে যেন বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়।
তিন লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি পদ শূন্য: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পরিসংখ্যান-২০২১ অনুযায়ী বর্তমানে সরকারি পদের সংখ্যা ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৫২টি। এর মধ্যে শূন্যপদ আছে তিন লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি। কর্মরত ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন।
সরকারি চাকরিতে সবচেয়ে বেশি পদ সংরক্ষিত আছে তৃতীয় শ্রেণিতে। এই শ্রেণিতে মোট পদের সংখ্যা ১১ লাখ ৯ হাজার ৫১৫। এ শ্রেণিতে বর্তমানে কর্মরত কর্মচারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯৬৭। সরকারি চাকরিতে চতুর্থ শ্রেণিতে মোট পদ আছে তিন লাখ ৫৩ হাজার ৭৭২টি। কর্মরত দুই লাখ ৩১ হাজার ৯২ জন। বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে।
সরকারি চাকরির সবচেয়ে কম পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে। এতে পদ আছে দুই লাখ ১০ হাজার ৭৫০টি। কর্মরত এক লাখ ৭০ হাজার ১৮৯ জন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে শূন্যপদ আছে ৪০ হাজার ৫৪১টি। প্রথম শ্রেণিতে পদ আছে দুই লাখ ৩৯ হাজার ১৫টি। এর মধ্যে কর্মরত এক লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৯ জন। এর বিপরীতে পদ খালি আছে ৪৩ হাজার ৩৩৬টি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচিব জানান, প্রশাসন যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, সে জন্য লোকবলকাঠামো তৈরি করা হয়। কিন্তু এত বেশিসংখ্যক পদ (এক-পঞ্চমাংশের বেশি) বছরের পর বছর শূন্য রাখার অর্থ হলো সরকারের দাপ্তরিক কাজগুলো ঠিকমতো হচ্ছে না। অন্যদিকে জনগণকেও সেবা পেতে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
করোনাকালে বাস্তব কারণেই সরকারি-বেসরকারি অফিসে নতুন নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু করোনা চলে যাওয়ার পরও নানা কারণে শূন্য পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া ঢিমেতালে চলছে।
জানা যায়, ২০২০ সাল শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৩৪ হাজার। এখন শূন্য পদের সংখ্যা আরও বেড়েছে। তবে করোনাকালে নিয়োগ বন্ধ থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়া বন্ধ ছিল না।