জীবাণুর ভাগাড় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ক্যান্টিন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩, ১৬:৫৬

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বঙ্গবন্ধু হলের ক্যান্টিনে ভাতের গামলার ওপর শত শত মাছির ভনভনানি। ছবি: বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
হাসানুজ্জামান (ছন্দনাম) দুপুরের খাবার খেতে গিয়েছে। কিন্তু, ভাতের গামলা আর টেবিলের ওপর শত শত মাছির ভনভনানি দেখে, তার নিশ্চিন্ত মনে খাওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। চিত্রটি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বঙ্গবন্ধু হলের ক্যান্টিনের। নাম প্রকাশ না করা শর্তে, ছন্দ নামে একথা বলছিলেন একই হলের তৃতীয় তলার এই আবাসিক শিক্ষার্থী।
এভাবে ক্যান্টিনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খোলা খাবারে মশা-মাছি পড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। ক্যান্টিন পরিচালকদের উদাসীনতা আর অবহেলায় এমন ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। নিরূপায় হয়ে মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুযুক্ত খাবার খেতে হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে হাসানুজ্জামান (ছন্দনাম) বলেন, মূলত মাছি মল-মূত্র, নর্দমা, ময়লা-আবর্জনা সহ বিভিন্ন নোংরা স্থানে গিয়ে বসে। আর, এসব থেকে নানা ক্ষতিকর জীবাণু নিয়ে সেই মাছিই খাবারের ওপরে বসলে খাওয়ার রুচি কোথায় থাকে? বঙ্গবন্ধু হলের ক্যান্টিনে খোলা রাখা খাবারে মাছির ভনভনানি দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন ব্যাকটেরিয়া-জীবাণুর ভাগাড়।
সরেজমিনে ক্যান্টিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, ক্যান্টিনের রান্নাঘরের ভিতরে ঝুড়িতে ভাত রাখা হয়েছে খোলা। খোলা ভাতের উপরের পুরো অংশজুড়ে মাছি বসেছে। আর, এই ঝুড়ি থেকেই খাবার নিয়ে রাখা হচ্ছে খাবার টেবিলে।
টেবিলে দেখা যায়, টেবিলের উপরে ভাত ও ডালের গামলাগুলো ঢাকনা ছাড়াই পড়ে আছে। এতে ভাতের উপরে ঝাঁকে ঝাঁকে বসছে মাছি। মাছি তাড়িয়ে তারপর নিতে হয় খাবার। এছাড়াও, আচার করে রাখা হয়েছে খোলা পাত্রে। আর, সেখান থেকেই আচার নিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে।
রান্নাঘরের ভিতরে গিয়ে আরও দেখা যায়, রান্নার অপরিষ্কার পাত্রগুলো পড়ে আছে। রান্নাঘরের অপরিষ্কার পাত্র, ঘিঞ্জি পরিবেশে এবং বাইরের খোলা ড্রেনের কারণেই অতিরিক্ত মাছির উপদ্রব। আর, এই মাছিই খোলা খাবারে পড়ে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এভাবে, মশা-মাছির বিষক্রিয়া সৃষ্ট খাবার গ্রহণ করে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্যান্টিনের পরিচালক সাগর হাওলাদার বলেন, আমরা সবসময় সচেতন কিন্তু ঢাকনা টেবিলে দিলেও শিক্ষার্থীরা ভাত নিয়ে ভাতের গামলা খোলা রাখে। রান্নাঘরের ভিতরে ভাতের ডেক আমরা নেট দিয়ে ঢেকে রাখি, মাঝে মাঝে কর্মচারীরা ভুলে নেট দেয়না তখন আমরা দেখলে নেট দিয়ে ঢেকে দিই। তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে খোলা ড্রেনের জন্য মাছির উপদ্রব বেশি হচ্ছে। আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি মানসম্মত খাবার পরিবেশন করার জন্য।
এ ধরনের খাবারের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মো. তানজীন হোসেন বলেন, এ ধরনের খাবার থেকে ব্যাকটেরিয়া ও নানা জীবাণু আক্রমণ করতে পারে, সেটা থেকে পেট ব্যাথা হতে পারে, ব্যাথা থেকে ডায়রিয়ায় রুপান্তর হতে পারে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় এসব খাবারের কারণে বমি হতে পারে।
এসব ক্ষেত্রে খাবার অবশ্যই ঢেকে রেখে ভালোভাবে খাবার পরিবেশন করা। আর রান্নার পরে খাবার ঢেকে রাখা উচিত এবং এ ধরনের খাবার সকলের খাওয়া উচিত। কারণ, মশা-মাছি পড়া খাবার অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক মো. আরিফ হোসেন বলেন, মাছি মারার জন্য কেমিক্যাল দেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা দেওয়া আছে। এছাড়াও, আমরা প্রতিনিয়ত দেখি। এরপরেও ছাত্ররা অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি দেখবো।
এছাড়াও ডাইনিংয়ের আবর্জনা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়টি সেন্ট্রাল। এই ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রজেক্ট পাশ করা হয়নি। যখন হবে তখন দেখা যাবে। আর, এটি হল কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারের মধ্যে না।