Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৩, ০৮:৫০

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ

প্রতীকী ছবি

২০২৩ সালের শুরু থেকে নতুন কারিকুলামে পাঠদান চলছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে। এ দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে কোনো প্রচলিত পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাউশি। এ নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ কাজ করছে।

একাধিক অভিভাবক বলেছেন, ছাত্রছাত্রীদের যদি পরীক্ষা না  থাকে, তারা তো পড়ালেখা করবে না। পড়ার টেবিলে বসবে না।  সারাক্ষণ টিভি মোবাইলে গেম, কার্টুন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার আগ্রহ কমে যাবে। পড়ালেখা গোল্লায় যাবে। 

জানা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম শুরু হয়েছে। নতুন কারিকুলামে এই দুই শ্রেণিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। কিন্তু এই মূল্যায়নের পুরো কাঠামো এখনো তৈরি করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। 

শিক্ষকরা বলছেন, বিদ্যালয়ে বছরব্যাপী শিখন কার্যক্রম চলাকালীন শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি এবং আচরণের নানামুখী বিকাশ সম্পর্কে জানার জন্য ধারাবাহিকভাবে যাচাই করা হবে, যা শিখনকালীন মূল্যায়ন। আর বছর শেষে একবার পরীক্ষা হবে যেটি সামষ্টিক মূল্যায়ন। 

এনসিটিবি বলেছে, এই দুই শ্রেণির ধারাবাহিক বা শিখনকালীন মূল্যায়ন চলছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন চলছে। কিন্তু স্কুলগুলোর চিত্র ভিন্ন। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি শিক্ষকরা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, এ বিষয়ে শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হবে। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া নতুন কারিকুলামের আলোকে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। তাই অনেকেই এই মূল্যায়ন শুরু করছে না।

অভিভাবকরাও বলছেন, ‘এই দুই শ্রেণির পড়াশোনা ও মূল্যায়ন কীভাবে হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না। আদৌ মূল্যায়ন হচ্ছে কি না, তা জানতে পারছি না। শিক্ষার্থীদেরও এই মূল্যায়নের বিষয় কিছু বলা হচ্ছে না। অথচ আমরা শুনেছি, নতুন কারিকুলামে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন হবে। এই মূল্যায়নে আমার সন্তান কোন অবস্থানে রয়েছে তা পরিষ্কার নয়। আমরা পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছি।’

সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এক আদেশে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে এনসিটিবির গাইডলাইন অনুযায়ী। এ গাইডলাইনের বিষয়ে পরে স্কুলগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এনসিটিবি প্রণীত শিক্ষক সহায়িকা এবং শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা অনুসারে করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত কোনো পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেওয়া যাবে না। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে এনসিটিবি থেকে যে গাইডলাইন পাওয়া যাবে, তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।

রাজশাহী জেলার গোগ্রাম আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহিদুল ইসলাম বলেন, ষষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বাতিল হওয়ার কারণে প্রতিযোগিতা কমেছে, ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে আসার ব্যাপারে আগ্রহ হারাচ্ছে, নেতা, পাতিনেতা, মেম্বার, চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালীর ছেলেমেয়েরা নাম্বার নেওয়ার জন্য এখন থেকে চাপ প্রয়োগ করছেন। এ অবস্থায় শিক্ষার গুণগত মান ব্যাহত হচ্ছে। পরীক্ষা পদ্ধতি চালু থাকলে অভিভাবক, শিক্ষার্থীর ভীতি থাকত না, মেধার মূল্যয়ন হতো, প্রতিযোগিতা বাড়ত।

এই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রের অভিভাবক নার্গিস খাতুন বলেন, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করার জন্য পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করা হচ্ছে। এমনি তো শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করতে চায় না। তাদেরকে পড়ার টেবিলে জোর করে বসানো হয়। আর তারা এখন বলছে পরীক্ষা হবে না তো পড়ে কী লাভ? তারা এখন পড়া বাদ রেখে টিভি ও মোবাইল চালিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছে। স্কুলে যাওয়ার আগ্রহও কমে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গেও দ্ব›দ্ব তৈরি হয়েছে। প্রধান শিক্ষকরা এই দুই শ্রেণিতে প্রচলিত পরীক্ষা নিতে চান। কিন্তু সহকারী শিক্ষকরা নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়টি তাকে অবহিত করলেও তা নিয়ে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষকদের বিরোধ তৈরি হচ্ছে। 

এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবহিত। শিক্ষকরা আমাকেও বলছেন। প্রধান শিক্ষকরা এখনো প্রশিক্ষণ পাননি। তাই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অতি দ্রæত প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রশিক্ষণ পাবেন। তখন তারা এই কারিকুলাম সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন।’

শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানেন, নতুন কারিকুলামে বছর শেষে একটি সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। কিন্তু এখন হবে ছয় মাস পর। কেন ছয় মাস পর পরীক্ষা হবে এ বিষয়ে এনসিটিবির এই সদস্য বলেন, শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন পরীক্ষা না থাকলে শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি দেয় না। পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করা হয়। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই পরীক্ষা ছয় মাস পর হচ্ছে। তবে এই মূল্যায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে এর কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫