৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের অধীন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দশটি বহুতল ভবনের কাজ চলমান। এসব ভবনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে নির্মাণ শ্রমিকরা। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই তাদের কাজ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নির্মাণ শ্রমিক।

তাদের দাবি, পর্যাপ্ত হেলমেট, সেফটি বেল্ট, ঢালাইয়ে কাজে ব্যবহৃত বুটসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রীর সংকট রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বলার পরেও তারা এসব সরবারহ করে না। পূর্বের ব্যবহৃত জিনিসপত্র আমাদের পরতে হয়। এতে নিয়মিত ছোট-বড় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় লালন শাহ হল সংলগ্ন এলাকায় একটি দশতলা ছাত্র হলের কাজ চলমান। এ ভবনের দশতলায় ঢালাইয়ের কাজ করছিলো শ্রমিকরা। অথচ তাদের মাথায় হেলমেট, পায়ে বুট জুতা, হাতে গ্লাভস কোনো কিছুই পরতে দেখা যায়নি। এমনকি লুঙ্গি পরে তাদের কাজ করতে দেখা গেছে। এছাড়াও নির্মাণাধীন ছাত্র হলটির পাশ দিয়ে একটি রাস্তা রয়েছে। এই রাস্তাটি দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার লোকজনের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবনের চারপাশে নেট অথবা টিন দিয়ে সুরক্ষিত রাখতে হয়। যাতে উপর থেকে নির্মাণ সামগ্রী পড়ে কারও ক্ষতি না হয়। এ নিয়মটিও মানা হচ্ছে না। ফলে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অন্যান্য বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও উপেক্ষিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ওবাইদুর রহমান আনাস বলেন, এই রাস্তাটি এখন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। দশতলা ভবনের ছাঁদে কাজ চলমান। অথচ নেই কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা। যেকোনো সময় উপর থেকে নির্মাণ সামগ্রী পড়ে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। বিষয়টির সমাধান চাই আমরা।

জাতীয় বিল্ডিং কোড (২০১৪) অনুযায়ী, নির্মাণকাজের সময় শ্রমিকদের পোশাক থেকে শুরু করে সবই হতে হবে নিরাপত্তাবান্ধব। বিশেষ করে মাথায় থাকার কথা সেফটি হেলমেট, কোমরে সেফটি বেল্ট, পায়ে বুটসহ ঢিলেঢালা পোশাক ইত্যাদি।’ কিন্তু এসবের নিশ্চয়তা ছাড়াই দিনের পর দিন কাজ করে যাচ্ছে শ্রমিকরা। পূর্বে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে দুইজন শ্রমিক মারা গেছেন। গত ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে কাজ করার সময় পাঁচতলা থেকে পড়ে যায় এক শ্রমিক। ঘটনাস্থলে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এর দুই বছর পর গত বছরের দুই ডিসেম্বর দশতলা দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনের কাজ করতে গিয়ে আরেকজন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনার পরে শিক্ষার্থীরা শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করেন। তখন কিছুটা নিয়ম মানলেও ফের নিরাপত্তা ছাড়াই চলছে ভবন নির্মাণের কাজ।

এ বিষয়ে দশতলা ছাত্র হলে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিক তারেক মিয়া বলেন, ‘দিনে-রাতে মিলে আমরা দুইশত মতো শ্রমিক কাজ করি। অথচ আমাদের বুট আছে মাত্র চার জোড়া। দুই দফায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু তারা আমলে নেয়নি। বাধ্য হয়ে আমাদের এভাবেই কাজ করতে হচ্ছে।’

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টিবিইল এম ইসলাম গ্রুপের প্রকল্প ম্যানেজার মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘সেফটির জন্য যা প্রয়োজন সবই দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় শ্রমিক হওয়ায় তারা এগুলো ব্যবহার করতে অনীহা প্রকাশ করে। এমনকি নষ্ট করে, আবার কেউ বাসায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আর নিয়ে আসে না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দীন বলেন, ‘নিরাপত্তা বিষয়ে ইতোপূর্বে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবহিত করা হয়েছিল। ফের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য চিঠি পাঠাবো। না মানলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে মেগা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. নওয়াব আলী বলেন, বহুতল ভবন নির্মাণে অবশ্যই বিল্ডিং কোড মানতে হবে। এর ব্যত্যয় করার সুযোগ নেই। বর্তমানে এসব কাজে শ্রমিকদের নিরাপত্তা কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে এমনটি অভিযোগ পেয়েছি। অতিদ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।