ইবিতে কোটি টাকার জেনারেটর ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ

ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:২৬

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: ইবি প্রতিনিধি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০ কিলো ভোল্ট (কেভিএ) ক্ষমতাসম্পন্ন দুইটি সাবস্টেশনের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে সাবস্টেশন দুইটিতে ৩০০ ও ৫০০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন দুইটি জেনারেটর বসানো হবে। কিন্তু সাবস্টেশন দুইটির কাজ শুরুর প্রায় এক বছর আগে জেনারেটর ক্রয় করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স। জেনারেটর দুইটি ক্রয়ে প্রকৌশল দপ্তরের অনুমতিও ছিলো না। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জেনারেটর বুঝে নেওয়া সংক্রান্ত ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এতে জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. রেজওয়ানুল ইসলামকে আহ্বায়ক করা হয়।
প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৯২ হাজার ৫৩০ টাকা ব্যয়ে গত বছরের ১০ নভেম্বর সাবস্টেশন দুইটির কাজ পেয়েছিলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন। কাজ শুরুর ১৩ মাসের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি শেষ করতে বলা হয়েছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনও কাজ শেষ হয়নি। এদিকে কাজ শুরুর এক বছর আগেই দুইটি জেনারেটর ক্রয় করে প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে প্রকৌশল অফিস ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জেনারেটর বুঝে নেওয়া সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদন দেয়। তারা বিষয়টি নিয়ে চারটি সভা করে। একইসাথে সরেজমিনে জেনারেটর দুইটি পরিদর্শন করেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেনারেটর দুইটির এলসি ডকুমেন্ট জানার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ইমেইল করে পর্যালোচনা কমিটি। তার জবাবে ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত তথ্যাদির সাথে মিল পাওয়া যায়। তবে তারা ভলবো ইঞ্জিন সুইডেনের তৈরি বললেও ইমেইলের জবাবে ভিন্নতা এসেছে। ইমেইলে জবাবে ভলবো ইঞ্জিনটি জার্মানির উল্লেখ করা হয়। একইভাবে টেন্ডার শিডিউলে পারকিন্স ইঞ্জিনটি ‘ইউকে’ অরিজিন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেখানে ‘ইউএসএ’ উল্লেখ করেছে। পরবর্তীতে জেনারেটর বুঝে নেওয়া কমিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যাদি পর্যালোচনা করে। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জেনারেটর দুইটির ইঞ্জিন নাম্বার ও সিরিয়াল নাম্বারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তথ্যাদির মিল পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী, ৩০০ কেভিএ জেনারেটর ইঞ্জিন ভলবো মেড ইন সুইডেন এবং অল্টারনেটর ইতালির হওয়ার কথা। কিন্তু তাদের ক্রয়কৃত ইঞ্জিনে মেড ইন ইন্ডিয়া পাওয়া গেছে। এদিকে ৫০০ কেভিএ জেনারেটরের ইঞ্জিন পারকিন্স মেড ইন যুক্তরাজ্য এবং অল্টারনেটর মেড ইন ইতালি হওয়ার কথা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ক্রয়কৃত জেনারেটর পারকিন্স ইঞ্জিনের গুরুত্বপূর্ণ কমপনেন্ট এর গায়ে চিনা লেখা পাওয়া যায়। এসব বিবেচনা করে জেনারেটর বুঝে নেওয়া সংক্রান্ত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়।
এবিষয়ে ঠিকাদারি কোম্পানি মজিদ সন্স কন্সট্রাকশন তদারককারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে তেমন বিস্তারিত জানি না। তবে জেনারেটর দুইটি ফেরত নিয়ে যাওয়া হবে এমনটি জেনেছি। বাকীটা প্রকৌশল অফিস বিস্তারিত বলতে পারবে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেটর বুঝে নেওয়া সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী কে এম শরীফ উদ্দীন বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা মিটিং করেছি। সেই রিপোর্ট ভিসি স্যারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। জেনারেটর ক্রয়ে অনিয়ম প্রমাণ মিলেছে। এমনকি তারা আমাদের অবহিত না করেই জেনারেটর দুইটি ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে।
এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, তারা যা করেছে এটা অনিয়ম। আমি জেনারেটর বুঝে নেওয়া কমিটির রিপোর্টটা দেখে জেনারেটর দুইটি ফেরত নিয়ে যেতে বলেছি। সিডিউল অনুযায়ী যা আছে তাই দিতে বলেছি।