Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

ভুলে ভরা পাঠ্যবই: যেসব বিষয়ে আপত্তি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:২০

ভুলে ভরা পাঠ্যবই: যেসব বিষয়ে আপত্তি

ফাইল ছবি

১ জানুয়ারি প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিয়েছে সরকার। এবার প্রাথমিক স্তরে ২য় শ্রেণি, মাধ্যমিকে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামে বই দেওয়া হয়েছে। এসব বইয়ে নানা ভুলভ্রান্তি, বাক্যে গঠনে অসঙ্গতির তথ্য পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে অষ্টম শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়গুলোকে তুলে ধরা হয়েছে খুবই খোলামেলা বাক্যে। যেখানে আপত্তিকর শব্দ রয়েছে। যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর থেকে নতুন কারিকুলামে বই দেওয়া শুরু হয়। ওই বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ২২টি বইয়ে ৪২১টি ভুল-ভ্রান্তির সত্যতা পায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ভুলগুলো সংশোধন করে এপ্রিল মাসে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে সংশোধনী দেওয়া হয়। শিক্ষকরা সংশোধিত সিলেবাসে বাকি বছর পড়াশুনা করান। তড়িঘড়ি করে নতুন কারিকুলাম চালুর কারণে এমনটি হয়েছে বলে দাবি করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

এবার সপ্তম ও ৮ম শ্রেণির বইয়ে নতুন কারিকুলামে বই দেওয়া হয়েছে। এসব বইয়ে বড় ধরনের ভুল না পেলেও বানান, বাক্য গঠনের অসঙ্গতির মতো বিষয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নতুন বইগুলোতে লেখা হয়েছে— বাংলা অ্যাকাডেমির যে বানান নীতি রয়েছে তা অনুসরণ করে।

নবম শ্রেণীর শিল্প ও সংস্কৃতি বইয়ে ভূমিকায় সহযোগিতা বানান লেখা হয়েছে সহযোগীতা। এখানে. ‘‘ি’’ স্থলে ‘‘ ী’’ ব্যবহার করা হয়েছে।

একইভাবে এই বইয়ের ণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধান মানা হয়নি। যেমন ‘ভূখণ্ড’ কে লেখা হয়েছে ভাতখন্ড।

পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়— বাক্যটি এই বইয়ে ১৫ বার ব্যবহার হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ বার ‘পৃখিবী’ লেখা হয়েছে। এখানে ‘থ’ স্থলে ‘খ’ অক্ষর লেখা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানিক, পাকিস্তানকে লেখা হয়েছে পকিস্তান।

অষ্টম শ্রেণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে সুস্থ বানান লেখা হয়েছে সুস্থ্য‌। ‘য’ ফলা ব্যবহার করে শব্দটাকে যেন অসুস্থ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও দুটি বাক্য গঠনে অসংখ্য ভুল এবং অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।

এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, অষ্টম ও নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের পান্ডুলিপি তাড়াহুড়ো করে লেখা হয়েছে। এজন্য কিছু ভুল থাকতে পারে। ভুলগুলো চিহ্নিতের পর সংশোধন করে আগামীতে বই ছাপানো হবে। বড় ধরনের কোনো ভুল পাওয়া গেলে তা কারেকশন আকারে শিক্ষকদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারা সেই মোতাবেক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাবেন।

অষ্টম শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ের আপত্তিকর অধ্যায়
অষ্টম শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে কৈশোরের কথামালা অধ্যায়ের ১৬টি পৃষ্ঠা রয়েছে। প্রত্যেক পৃষ্ঠায় কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো খোলামেলাভাবে আলোচনা করা হয়েছে। একটি ছেলে একটি মেয়ের নিদিষ্ট বয়সের পর তাদের  শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো কীভাবে হয়, তা গল্প দিয়ে বুঝানো হয়েছে। গল্পের পর তাদের কুইজ উত্তর লেখার অপশন রাখা হয়েছে।

শিক্ষাবিদরা শিক্ষার্থীদের শারীরিক পরিবর্তনের এ বিষয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোকে স্বাগত জানালেও যে ভাষায় তা উপস্থাপন করা হয়েছে তা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তারা বলছেন, এই অধ্যায়টা কিশোর-কিশোরীদের বয়স উপযোগী হয়নি। এমনকি যেসব ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা আমাদের দেশের পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে যায় না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমরা পাঠ্য পুস্তকের মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিকালের শিক্ষা দেব; এটা যেমন ঠিক। তেমনি সেটা যেন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট, পরিবেশ পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে হয় সেটাও দেখা উচিত। কিন্তু অষ্টম শ্রেণির বইয়ের একটি অধ্যায়ে বিষয়টিকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা খুবই দৃষ্টিকটু ও আপত্তিকর।

কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক পরিবর্তন প্রসঙ্গে এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, এখানে লজ্জার কিছু নেই। বিষয়টা প্র্যাকটিক্যাল হচ্ছে সেটা লুকিয়ে পড়িয়ে তো লাভ নেই। তাই সরাসরি পড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। যেহেতু কিশোর-কিশোরীদের জানাতে চাই, তাই লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে ভাষাগত বিষয়গুলো যদি কোনো আপত্তি উঠে থাকে তা আমরা সংশোধন করবো সেই সুযোগ তো থাকছেই।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫