নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করার দাবি জবি শিক্ষার্থীদের

জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৪

সংবাদ সম্মেলন শেষে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: জবি প্রতিনিধি
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল’ স্বাধীনভাবে এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতা নিয়ে তার কার্যক্রম ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি স্বাধীন, শিক্ষার্থী বান্ধব ও প্রাথমিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী যৌন ও সকল প্রকার নিপীড়ন বিরোধী সেল সক্রিয় ও কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার (২০ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলন শেষে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ‘যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল’ রয়েছে। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই সেল বিষয়ে কতটা জানেন যে বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করছি। সন্দেহ পোষণ করার কারণ হিসেবে, এই সেলের অকার্যকারিতার দিকে খেয়াল করলে আমরা পুরোটা বুঝতে পারি।
এই সেলের ‘গঠন প্রণালী’ কি রকম হতে পারে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। সেগুলো হলো:
১. বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের বাইরে এই সেল স্বাধীনভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
২. প্রক্টরিয়াল বডির প্রভাবমুক্ত সেল গঠন করতে হবে।
৩. এই সেল সরাসরি উপাচার্য মহোদয় কর্তৃক পরিচালিত হবে।
৪. সেলের কমিটিতে রাজনৈতিক ও অন্যান্য প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকবে।
৫. এই সেলে বহিঃসদস্য হিসেবে কমপক্ষে একজন আইনজীবী ও একজন মানবাধিকার কর্মী নিয়োগ করতে হবে।
৬. এই সেল শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক সত্যতা যাচাই করে, সিন্ডিকেট মিটিংয়ের অপেক্ষা না করে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযুক্তকে সাময়িক বহিষ্কার করবে।
৭. এই নিপীড়ন বিরোধী সেল অভিযোগকারী বা ভিক্টিমের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে।
৮. যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি সকল প্রকার নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত করতে এই সেল বাধ্য থাকবে।
৯. প্রত্যেক মাসে কমপক্ষে একবার এই দেশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে ‘মত বিনিময় ও জবাবদিহি’ সভার আয়োজন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে ইভান তাওসিফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মৃত্যুগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নানা সময়ে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন নিপীড়নের স্বীকার হয়েছে। কিন্তু এসবের বিচার না হয়ে উল্টো দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সিন্ডিকেটের ভয়ে যৌন নিপীড়ন সেলে অভিযোগ দিতে দ্বিধা করে। ক্যাম্পাসের প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী মনে করেন অভিযোগ, আন্দোলন করে কাজ হবে না। আমরা চাই শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা সুস্থ সম্পর্ক হোক। এ কারণে আন্দোলন গড়ে তোলা। উপাচার্য মহোদয় মুখে আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু আমরা লিখিত আকারে বাস্তবায়ন চাই।
আরেক শিক্ষার্থী শাহ সোবহান সাকিব বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি করছি শিক্ষার্থীদের এই সেল সম্পর্কে অবহিত করা। শিক্ষার্থীরা জানে না এ সেল সম্পর্কে আর এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি। এটা টেকনিক্যাল মার্ডার অংকন অবন্তিকা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বর্তমান যৌন নিপীড়ন সেল স্বাধীনভাবে কাজ করতে ব্যর্থ।
উপাচার্যের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি করে- অবন্তিকা হত্যার সমস্ত প্রমাণ আমলে নিয়ে দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এবং রাষ্ট্রীয় আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, দ্রুততম সময়ে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণ করতে হবে। অংকন বিশ্বাসসহ পূর্বে দায়েরকৃত সকল অভিযোগের দ্রুত তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে। পূর্বতন প্রক্টরিয়াল বডির বিরুদ্ধে গ্রহণযোগ্য তদন্ত করতে হবে এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ফাইরুজ অবন্তিকা এবং অংকন বিশ্বাসদের স্মৃতিতে ক্যাম্পাসে দুটি স্থায়ী ফলক নির্মাণ কারতে হবে।
আগামীকাল বুধবার নতুন একাডেমিক ভবনে (বিবিএ) অবন্তিকা ও কলা ভবনে অংকন বিশ্বাসের গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।