মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের রায়, জাবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৪, ২০:০৬

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে আজ বুধবার (৫ জুন) রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে। কোটা বহালের এ সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা বহালের ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন তারা। সেই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখাকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থী বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্য সন্তান। তাদের আমরা শ্রদ্ধা করি। তাদের সম্মানে রাষ্ট্র তাদের ভাতা দেয়। বাবার ভালো কর্মের জন্য ছেলে কখনো কখনো ছেলে-মেয়েরা পুরস্কৃত হতে পারে। কিন্তু তাদের নাতি নাতনিরা কীভাবে কোটা সুবিধা পায় আমার বুঝে আসে না। আদালত তার সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করবে বলে আশা করি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্যই আমরা পাকিস্তানের থেকে আলাদা হয়েছি। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে–মেয়ে, নাতি-নাতনি ৩০ শতাংশ বেশি সুবিধা পায়। তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে এটা এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে গেলে। আমরা অতি দ্রুত এ ধরনের বৈষম্যমূলক রায় বাতিল চাই।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ত্রয়োদশতম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৪৫% কোটা তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কোটা পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশির ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কোটা বাতিলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের একদিন পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ পরিপত্র জারি করে। এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
এর আগে, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ২০১৮ সালের ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। প্রাথমিকভাবে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও পরে আরো ৯০ কার্যদিবস সময় পায় কমিটি। একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কোটা সংস্কার বা পর্যালোচনা কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোটা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেন।
কমিটির প্রতিবেদন ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনো কোটা পদ্ধতি থাকবে না। সরাসরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে।
তবে সময়ের প্রেক্ষাপটে কোনো অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটার প্রয়োজন দেখা দিলে বা কোটার অপরিহার্যতা দেখা দিলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি আরো বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে যে ব্যবস্থা আছে তা বহাল আছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা দীর্ঘদিনের। ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, আধাসরকারি, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয়করণ করা প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য ১০% কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময় এ কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করে সরকার।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি ৩০%, প্রতিবন্ধী ১%, নারী ১০%, পশ্চাৎপদ জেলাগুলোর জন্য ১০%, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৫% মিলিয়ে শতকরা ৫৬ ভাগ কোটা পদ্ধতি চালু ছিল।