
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, গতকাল অর্থমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেছে আমরা অর্থমন্ত্রীকে আমরা চাই না, অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।
আজ বুধবার (৩ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে এই কথা বলেন তিনি।
এসময় তিনি আরো বলেন, যেভাবে শিক্ষকদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে দিলেন এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কখনোই অযৌক্তিক আন্দোলন করে নাই, দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও আমরা প্রাণ দিয়েছি, আমরা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি। কিন্তু যারা সর্বোচ্চ প্রশাসনের সাথে রয়েছে তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে আমাদেরকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা যারা অধ্যাপক রয়েছি আমাদেরকে মারাত্মকভাবে চপেটাঘাত করা হয়েছে। আমরা এই স্কিম প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহবানে তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
এসময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহেদ রানার সঞ্চালনায় শিক্ষকেরা বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমরা এই বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি জারি রাখবো।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রববানী বলেন, আমরা একটা চক্রান্তের স্বীকার হয়েছি। সরকারের বোঝা উচিত যে আমলারা এই ধরণের স্কিম এর মাধ্যমে শিক্ষকদের অপমানিত করেছে। আমি বলতে চাই, শিক্ষকদের এই আন্দোলন যৌক্তিক আন্দোলন। কেননা এই বাংলাদেশে ৫২ থেকে শুরু করে যত আন্দোলন হয়েছে তা করেছে ছাত্ররা এবং এর পিছনে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। সুতরাং শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করে যাব।
প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, আমরা যখন দেখেছি, আমাদের সরকার পেনশন স্কিমের ধারণা দিচ্ছে তখন কত চমৎকার ছিল যে সবধরনের পেশার লোকজন এর আওতায় আসবে কিন্তু যখন প্রত্যয় স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন এলো সেটি শিক্ষকদের উপর বৈষম্যমূলকভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করেছিলাম কিন্তু আমরা তার বক্তব্যে ব্যাহত হয়েছি। আমরা বুঝতে পারছি একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। অথচ ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় আপনারা ঠিক উলটো চিত্র দেখতে পাবেন। কিন্তু শিক্ষকদের অপমান কেবল এই দেশেই করে যাচ্ছে। আমরা অনুরোধ করছি আপনারা এটি তুলে নিয়ে আমাদেরকে ক্লাসে ফেরার সুযোগ করে দিন।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, যে বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছে, আমাদেরকে গবেষণার স্বাধীনতা দিয়েছে, চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছে সেখানে কোন আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতায় আমাদের সাথে কোন আলোচনা না করে এই ধরণের একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো তা কোনভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষকদেরকে আলোচনার বাইরে রেখে প্রত্যয় স্কিম নামক এক হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যেখানে আমলারা দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না, অর্থমন্ত্রীও আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাহলে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছি সেটা কিভাবে সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, আমরা গবেষণাগারে থাকতে চাই, আমরা শ্রেণিকক্ষে থাকতে চাই। আমি সকল শিক্ষকদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে সকল শিক্ষকরা আজকে এক হয়ে এই আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এক হয়ে আন্দোলন করে যাব।
সমাপনী বক্তব্যে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, আমরা যেভাবে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি, তেমনি আমাদের দাবি আদায়ের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি দিয়েছি, তবে আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। আজকে ছাত্ররা আন্দোলন করছে, অথচ আপনিই বলেছিলেন, যে কোটা থাকবে না, কিন্তু আবার কেন কোটা দেয়া হলো? আপনিই বলেছেন, পেনশন সংক্রান্ত কোন ঝামেলা হবে না, কিন্তু তারপরেও কেন শিক্ষকদেরকে এই ধরণের বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিমের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, একটা কুচক্রী মহল শিক্ষকদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে । আপনি শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত করে এই ধরণের স্কিম জারি রাখবেন না, এইটা আপনার কাছে অনুরোধ রইলো। শিক্ষকদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে মাদেরকে দ্রুত ক্লাসে ফেরার সুযোগ করে দিন।
এসময় তিনি শিক্ষকদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে আগামীকাল ও সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলাকালীন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচে বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, লুৎফর রহমান, শফিক উর রহমান, শফিকুল ইসলাম, সুব্রত বণিকসহ আরও অনেকে।