Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক

Icon

মো. রাফি সারোয়ার, বুটেক্স

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৬:২৭

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক

টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী।

মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি স্বরূপ একাধিক স্যারের কাছে পরীক্ষা দিত মিরাজ। ফলে একদিনে একাধিক স্যারের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া তার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তাই চেয়েও সে পরীক্ষাগুলোর জন্য ভালো প্রস্তুতি নিতে পারত না। ফলে যা হওয়ার তাই হল, কয়েকমাস যাবত সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্সের পরও সে সোহেল স্যারের ফাইনাল মডেল টেস্টে ভালো পজিশন আনতে পারলো না।

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের জীববিজ্ঞান ও রসায়নের শিক্ষক সোহেল স্যার। তিনি মিরাজকে নিয়ে অনেক আশাবাদী ছিলেন। মনে করতেন মিরাজই প্রথম প্রাইজ ল্যাপটপটি পাবে। কিন্তু শেষমেশ তা আর হয়নি। তখন সামনের এসএসসির জন্যও তার কনফিডেন্সের ঘাটতি দেখা দেয়। শেষ সময়ে এসে স্যার তাকে কিছু কথা বলেন।

তিনি বলেন, আজকে হয়ত তুমি ল্যাপটপ না পাওয়ায় কষ্ট পাচ্ছ। আমি জানি তুমি এর চেয়ে বেশি কিছু ডিজার্ভ করো। এখনো অনেক দূর যাওয়া বাকি। আজকে একটা ল্যাপটপ তোমার হয়নি তো কি হয়েছে? ভবিষ্যতে তুমি নিজেই দশটা ল্যাপটপ কিনতে পারবে। 

ছেলেমানুষি এই গল্পটি মুহাম্মদ মিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর। সে এখন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ৪৯তম ব্যাচের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। আজও কথা হলে স্যারের প্রতিটি বাক্যে আলাদা একটি স্নেহ পায় সে। তার মতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র–শিক্ষক সম্পর্ক শিক্ষার মান উন্নত করার মূল ভিত্তি। এই সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মান, সমর্থন ও সহানুভূতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে।

উভয় পক্ষের উচিত নিজ নিজ দায়িত্ব আন্তরিকতার সাথে পালন করা। কেননা আন্তরিকতার অভাবে শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদানে এক ধরনের একঘেয়েমি চলে আসে। যার ফলে নতুন কিছু শিখার আগ্রহ ধীরে ধীরে কমে যায়। পাশাপাশি একটি সুস্থ ও উন্মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যাগুলো আলোচনা করে শিক্ষকদের কাছ থেকে সহায়তা নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি পড়াকালীন সাকিবের বাড়ন্ত কৈশোর ছিল উড়নচণ্ডী স্বভাবের। যার দরুন শিক্ষকদের চোখে সে ছিল তথাকথিত খারাপ ছাত্র। একদিন একজন শিক্ষক তার পছন্দের কলেজ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। উত্তরে যখন শুনলেন নটরডেম কলেজ, তখন কটাক্ষের সুরে তাকে শুনতে হয়েছে নটরডেমের গেইট কখনো স্বপ্নেও সে দেখেছে কিনা!

তখন সাকিবের স্কুল জীবনের সব থেকে পছন্দের শিক্ষক অর্জুন স্যার তাকে কিছু কথা বলেন। তিনি সাকিবকে বলেন নিষ্ঠার সাথে লেগে থাকতে। যাতে সে ওই শিক্ষককে ভুল প্রমাণ করতে পারে। সাকিব নটর ডেমে চান্স পেলো। রেজাল্ট পাওয়ার পর পরই ছুটে গিয়েছিল সে স্যারের কাছে।

মো. নাজমুছ সাকিব বর্তমানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ৪৬তম ব্যাচের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত আছে। সে মনে করে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক হওয়া উচিত অভিভাবক–সন্তানের মতো, যেখানে থাকবেনা কোনো হিংসা-বিদ্বেষ, দাম্ভিকতা বা কোনো অসদাচরণ। যেই সম্পর্ক গড়ে উঠবে স্নেহ, শ্রদ্ধা আর শাসনের সংমিশ্রণে।

ছাত্র-শিক্ষকের সুসম্পর্ক বজায় থাকবে তখনি যখন একজন শিক্ষক অ্যাকাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি তার ছাত্রদের উপর মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভালো প্রভাব ফেলতে পারবেন। কারণ সমাজের অগ্রগতির জন্য একজন ভালো ছাত্রের পাশাপাশি সৎ, নিষ্ঠাবান ও আদর্শ মানুষ হওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। 


এই প্রসঙ্গে ৪৭তম ব্যাচের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের হাসনাত জাহান হিয়া বলেছেন, আমরা জানি শিক্ষক হলেন উত্তরসাধক মাত্র। আর এই উত্তরসাধকই একজন ছাত্রের বিশ্বস্ত পথপ্রদর্শক। তাই ছাত্র–শিক্ষক সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত যেখানে একজন শিক্ষার্থী কোনো কিছু জানতে বা ব্যর্থতা প্রকাশ করতে কোনোপ্রকার কুণ্ঠাবোধ না করে। কেবল পাঠদান একজন শিক্ষকের দায়িত্ব নয়। তাদের পড়াশুনায় উৎসাহিত করা, ভালো মানুষ হতে সহায়তা করও একজন শিক্ষকের কর্তব্য। একই সাথে ছাত্রদের উচিত শিক্ষকের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল থাকা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫