Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

কবে খুলবে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়?

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৩

কবে খুলবে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়?

ফাইল ছবি

সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারে দাবিতে আন্দোলন ও পেনশন স্ক্রিম নিয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে চলতি মাসের শুরু থেকেই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এর মধ্যে কোটা আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে গত ১৬ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোও খালি করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে সরকার কারফিউ জারি করে। সারাদেশে নিয়ন্ত্রিত পরিসরে অফিস আদালত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলার নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে সরকার সবকিছুর উপর জারি করা বিভিন্ন নিয়মনীতি তুলে নিতে শুরু করে। সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত সচল করা হয়েছে। তবে এর বাইরে রয়ে গেছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে, কিন্তু কবে খুলবে তারও কোনো উত্তর নেই কারও কাছে। 

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার বিষয়ে এখনো কোন সুস্পষ্ট তথ্য জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে আবার কোনো সমস্যা হয় কি না, সেটিই তাদের ভাবনার বিষয়।

এর ফলে বন্ধ হয়ে গেছে চলমান এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা, মাধ্যমিক পর্যায়ের ষান্মাসিক পরীক্ষাও। এইচএসসি-আলিম পরীক্ষা শেষ হয়ে ফলাফল হওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা শেষে ক্লাস শুরুর আগেই তাই সেশনজটে পড়বেন পরীক্ষার্থীরা। 

অন্যদিকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হবে না মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে। আর উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের টানতে হবে অচেনা সেশনজট। 

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছেন, সবকিছু সচল হচ্ছে এখন কেবল বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তারা বলছেন, দিনের পর দিন এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলে একদিকে যেন উচ্চশিক্ষায় তৈরি হবে সেশনজট, অন্যদিকে লম্বা ছুটিতে হাপিয়ে উঠবে ঘরবন্দি শিশু শিক্ষার্থীরা। তাই অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

অপরদিকে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আজ মন্ত্রী পরিষদের সভায় আলোচনা হতে পারে। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্টরা সার্বিক বিষয় তুলে ধরতে পারেন। সেখান থেকেই পরবর্তী নির্দেশনা আসতে পারে। 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ এই ৪ জেলা ব্যতীত বাকী ৬০ জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব করা হবে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা পুনরায় চালুর বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের শুরুতে তীব্র শীতের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছুদিন বন্ধ রাখা হয়, পরবর্তীতে রমজান ও ঈদুল ফিতর, তাপপ্রবাহ, ঈদুল আযহা এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেয়া হয়। যদিও রমজানের ছুটির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্যাপক নাখোশ ছিলেন। পরবর্তীতে সেই ছুটির বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সে সময় রমজান মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না রাখার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ক্ষতির বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি সেই সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য শনিবারের ছুটিও বাতিল করেন। 

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সেই সময়ে মন্ত্রীর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, সে সময় রমজান মাসে সকলেই চাইছিল রোযার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হোক। কিন্তু মন্ত্রী তাতে রাজী হননি। আর এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে তাদের কোন তাড়া নেই।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এখন যে ছুটি যাচ্ছে, শিক্ষাবর্ষের এই সময়টা লেখাপড়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এখনো অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শেষ করা যায়নি। বিভিন্ন শ্রেণির পরীক্ষা স্কুলগুলো নিচ্ছে। এই বন্ধের জন্য বিলম্বিত হচ্ছে। যত বেশি ছুটি থাকবে, পরীক্ষা সম্পন্ন করে আবার ক্লাস নিতে হবে। নতুন কারিকুলাম, ক্লাসগুলোয় শেষ করতে হবে। সামনে ডিসেম্বরে আবার বার্ষিক পরীক্ষা। এখন ক্লাসগুলো বন্ধ। এগুলো পুষিয়ে নিতে একটা কৌশল তো সরকারকে নিতে হবে। সে জন্য বাড়তি ক্লাস নিতে হবে।

সরকার সিদ্ধান্ত নিলে ক্লাসের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, সরকার হয়তো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিচ্ছে না। যখনই ঘোষণা দেবে, আমরা নতুন করে ক্লাসরুটিন করে বাচ্চাদের বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।

এদিকে দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কবে খুলবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। তবে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি।

শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা এই মুহূর্তে বিবেচনা করতে পারছি না।

মন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি এখন কেবল তাঁদের ওপর নির্ভর করছে না। এখন সবার আগে জননিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে পরিস্থিতির প্রতিবেদন আনা হচ্ছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে প্রায় ৩০০ কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলসমূহের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছ থেকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে বিভিন্ন হলের কক্ষগুলো সংস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫