কম খরচে সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার সুযোগ

মীর ইফতেখার উদ্দিন ফাহাদ
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩২

সুইজারল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
জীবনযাত্রা যথেষ্ট ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের অষ্টম শিক্ষার্থীবান্ধব শহর হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের বৃহত্তম নগরী জুরিখ। চলুন জেনে নেই সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় আবেদন প্রক্রিয়া, স্টুডেন্ট ভিসা, অধ্যয়ন খরচ এবং স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে।
কেন সুইজারল্যান্ড উচ্চশিক্ষার অন্যতম সেরা গন্তব্য গ্লোবাল ইনোভেশন ইন্ডেক্স অনুসারে একটানা ১৩ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী দেশের মর্যাদা পেয়ে আসছে সুইজারল্যান্ড। এর নেপথ্যে রয়েছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবধর্মী গবেষণা ও সৃজনশীলতা চর্চা। কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ১০০-এর মধ্যে থাকা এদেশের ৩টি বিদ্যাপীঠ হলো- ইটিএইচ জুরিখ (৭), ইকোল পলিটেকনিক ফেডারেল ডি লোস্যান (৩৬), এবং ইউনিভার্সিটি অয জুরিখ (৯১)।
সেরা বিষয়গুলো
হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট, বিজনেস অ্যান্ড ফাইন্যান্স, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিসিন অ্যান্ড হেল্থকেয়ার, আইন, অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিক্স ও সাংবাদিকতা।
আবেদনের উপায়
এখানে প্রধানত দুটি মৌসুমে ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। একটি হচ্ছে- ফল ও অপরটি স্প্রিং। ফলের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এর পর আবেদনগুলো যাচাইয়ের ভিত্তিতে ভর্তি শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে। অপরদিকে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হয় স্প্রিং-এ, যার প্রক্রিয়া পরিপূর্ণ হয় ফেব্রুয়ারি থেকে ভর্তি শুরুর মাধ্যমে। দুটি ভর্তি মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে ফল সেশন। আবেদনগুলো কোনো কেন্দ্রীয় সিস্টেমের মাধ্যমে নেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীদের সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
প্রার্থীর স্বহস্তে পূরণকৃত আবেদনপত্র, দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, বৈধ পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি, বিগত শিক্ষাগত যোগ্যতা সাপেক্ষে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, ব্যাচেলরের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সনদ বা ডিপ্লোমা কিংবা তার সমতুল্য সনদ, স্নাতকোত্তরের জন্য স্নাতক ডিগ্রি বা সমমানের সনদ, পিএইচডি স্তরের জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা সমতুল্য সনদ।
ভাষার দক্ষতা প্রমাণ
আইইএলটিএস (সাধারণত ন্যূনতম স্কোর ৬ দশমিক ৫), টোফেল (আইবিটি) (সর্বনিম্ন স্কোর ৮০), পিটিই একাডেমিক (ন্যূনতম স্কোর ৫৮)।
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন
সুইস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ মেয়াদে পড়াশোনার জন্য ডি টাইপ ভিসার আবেদন করতে হয়। এই ভিসা ক্যাটাগরিতে ৯০ দিন বা ৩ মাসের বেশি সময় সুইজারল্যান্ডে থাকার অনুমতি লাভ করা যায়। আবেদনপত্রসহ সমুদয় কাগজপত্র জমা প্রদানের জন্য সশরীরে সুইস দূতাবাসে উপস্থিত হতে হয়। সেখান থেকে নথিগুলো যাচাইয়ের জন্য সুইজারল্যান্ড ক্যান্টন অভিবাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
ভিসা ডি টাইপের মেয়াদ নির্বাচিত প্রোগ্রামের সময়কালের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে। যেমন- স্নাতকের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৪ বছর এবং স্নাতকোত্তরের জন্য ২ থেকে ৬ বছর। এই অনুমতির মধ্যে কিন্তু অন্য সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের সুবিধা আওতাভুক্ত নয়। তার জন্য আলাদা করে শেনজেন ভিসা নিতে হবে, যার ক্যাটাগরি হচ্ছে সি টাইপ।ভিসার যাবতীয় নথি জমা দিতে যাওয়ার পূর্বেই মেইলের (dhaka.visa@eda.admin.ch) মাধ্যমে দূতাবাসে সাক্ষাতের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ঠিকানা : বে’স এজওয়াটার, অষ্টম তলা, প্লট ১২, নর্থ এভিনিউ, গুলশান-২, ঢাকা-১২১২।
সুইস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির অফার লেটার
পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশে ফিরবেন- এই মর্মে আবেদনকারীর লিখিত ঘোষণাপত্র স্পন্সরের নিকট থেকে বিজনেস লেটারহেডে প্রস্তুতকৃত কভারিং লেটার, যেখানে উল্লেখ থাকবে তিনি শিক্ষার্থীর সুইজারল্যান্ডে অধ্যয়নের যাবতীয় খরচ বহন করবেন।
স্টুডেন্ট ভিসা ফি এবং প্রক্রিয়াকরণের সময়
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সুইস স্টুডেন্ট ভিসা সম্পূর্ণ ফ্রি। ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সাধারণত ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ সময় লাগে। তবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এই সময়টি পরিবর্তিত হয়ে কয়েক মাস পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। তাই সুইজারল্যান্ড গমনের তারিখের অন্তত ৩ থেকে ৬ মাস আগে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। সেই সঙ্গে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ নথি নির্ভুল হওয়া এবং তথ্য পরিবেশনে যথাযথ স্বচ্ছতা প্রদর্শন করা অপরিহার্য।
পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অধ্যয়নের বিষয় নির্বিশেষে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য প্রতি সেমিস্টারে খরচ হতে পারে গড়ে ৭৩০ থেকে ৯৫০ ফ্রাঙ্ক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি ১ লাখ ৩ হাজার ২৬ থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ টাকার সমতুল্য।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর ও মাস্টার্সের জন্য বার্ষিক অধ্যয়ন ফি গড়ে ১ থেকে ২ হাজার ফ্রাঙ্ক (১ লাখ ৪১ হাজার ১৩১ থেকে ২ লাখ ৮২ হাজার ২৬২ টাকা)। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ফি হতে পারে ১০ থেকে ২০ হাজার ফ্রাঙ্ক (১৪ লাখ ১১ হাজার ৩০৮ থেকে ২৮ লাখ ২২ হাজার ৬১৭ টাকা)।
পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য বাজেট রাখতে হবে (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে) ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ফ্রাঙ্ক (৭০ হাজার ৫৬৫ থেকে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৫৭ টাকা)। একই ধরনের প্রোগ্রামের ব্যয়ভার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৫ থেকে ১০ হাজার ফ্রাঙ্ক-এ বা ৭ লাখ ৫ হাজার ৬৫৪ থেকে ১৪ লাখ ১১ হাজার ৩০৮ টাকা।
জীবনযাত্রার খরচের নিরীখে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ সুইজারল্যান্ড। অবশ্য দেশটির বিভিন্ন শহরে এই বাজেটের তারতম্য ঘটে। সবচেয়ে দামি শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে জুরিখ ও জেনেভা। অন্যদিকে বার্ন ও লোসান-এ জীবনযাত্রার খরচ মোটামুটি সাশ্রয়ী।
স্কলারশিপের সুবিধা
বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ, অনুদান এবং আর্থিক সহায়তা হিসেবে সুইস সরকার প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক বরাদ্দ রাখে।
পড়াশোনার পাশাপাশি খ-কালীন চাকরির সুযোগ
স্টুডেন্ট ভিসার আওতায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার চলাকালে প্রতি সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি পান। আর নানা উপলক্ষে ছুটির দিনগুলোতে ফুলটাইম কাজ করা যায়।