Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

সুইডেনে উচ্চশিক্ষার সুযোগ

Icon

মীর ইফতেখার উদ্দিন ফাহাদ

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৪

সুইডেনে উচ্চশিক্ষার সুযোগ

কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। ছবি: সংগৃহীত

সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রম শেনজেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এর মধ্যে কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষ শতকে রয়েছে কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (৭৩) ও লুন্ড ইউনিভার্সিটি (৮৫)। জানা যাক শেনজেনভুক্ত দেশ সুইডেনে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, অধ্যয়ন খরচ এবং স্কলারশিপ সম্পর্কে।

সেরা বিষয়গুলো

এখানে পড়ার জন্য সেরা বিষয়গুলো হচ্ছে- প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ব্যবসা ও অর্থনীতি, সাংবাদিকতা, যোগাযোগ ও তথ্য, লাইফ সায়েন্সেস অ্যান্ড মেডিসিন ও ডিজাইন অ্যান্ড আর্কিটেকচার।

আবেদনের উপায়

সাধারণত ফল ও স্প্রিং সেমিস্টার- এই দুই সময়ে ভর্তির কার্যক্রম চালু করে সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এর মধ্যে ফল সেমিস্টার আগস্টের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে শুরু হয়। এই মৌসুমে আবেদনের জন্য সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রোগ্রাম চালু থাকে। আবেদন গ্রহণ অব্যাহত থাকে জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। ফল-এ যে প্রোগ্রামগুলো বাদ পড়ে যায়, সেগুলোতে ভর্তির আবেদন নেওয়া হয় স্প্রিং সেমিস্টারে। এ মৌসুমে ডিসেম্বর থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়ে চলে পরের বছরের আগস্ট পর্যন্ত।

কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামার সেমিস্টারেও ভর্তি নেওয়া হয়। তাই উত্তম হচ্ছে প্রথমে বিষয় পছন্দ করে তার জন্য উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করে তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট চেক করা।

তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আবেদনের ব্যাপারে ফল সেমিস্টারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কেননা আবেদনের জন্য যথেষ্ট বিকল্প কোর্স পাওয়ার সুযোগ তো আছেই। তা ছাড়া এ সময়ে আবেদন করা হলে অধ্যয়ন ফি প্রদান, প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রেরণ, রেসিডেন্স পার্মিটের আবেদন এবং আবাসন খোঁজার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে যে কোনো প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য একটি সাধারণ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের (universityadmissions.se) মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হয়। এখানে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে কাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রামগুলোকে নির্বাচন করে সেগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত করে রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত আবেদন প্রক্রিয়া শুরুর পূর্বে প্রতিটি প্রোগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো জেনে নেওয়া উচিত।

ভর্তির আবেদনের জন্য কাগজপত্র

একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, সিভি বা পোর্টফোলিও, স্টেটমেন্ট অব পার্পাস, লেটার অব মোটিভেশন, লেটার অব রিকমেন্ডেশন, আবেদন ফি পরিশোধের রসিদ, স্নাতক প্রোগ্রামে আবেদন করলে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার সনদ, স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য ৪ বা অনার্সসহ ৩ বছরের স্নাতক ডিগ্রির সনদ, ইংরেজি ভাষা দক্ষতার স্কোর।

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন

দীর্ঘকালীন পড়াশোনার জন্য এই ইইউ সদস্য রাষ্ট্রে যেতে হলে অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। এই পারমিটে অধ্যয়নের জন্য ৩ মাস বা ৯০ দিনের বেশি সুইডেনে বসবাস করার অনুমতি লাভ করা যায়।

এ ক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি, এই পারমিট নিয়ে শেনজেনভুক্ত অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করা যাবে না। তার জন্য আলাদাভাবে স্বল্প মেয়াদি (৩ মাসের কম সময়ের জন্য) ভিসার আবেদন করতে হবে।

ভিসার আবেদন

পাসপোর্টের ডাটা পৃষ্ঠা (পাসপোর্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অন্তত ৩ মাস পর্যন্ত বৈধ থাকতে হবে এবং যেখানে কমপক্ষে দুটি খালি পৃষ্ঠা থাকবে)। সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি। সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্যুকৃত ভর্তির অফার লেটার (এখানে পূর্ণকালীন অধ্যয়নের সময়সীমা ন্যূনতম ৯০ দিন বা ৩ মাসের অধিক হতে হবে) থাকতে হবে। 

ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি

স্টুডেন্ট রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন ফি ১ হাজার ৫০০ ক্রোনা। বাংলাদেশের সুইডেন দূতাবাস ওয়েবসাইট অনুসারে, এই ফি ১৪ হাজার ৮০০ টাকা, যেটি জমা দিতে হবে ব্র্যাক ব্যাংকে সুইডেন দূতাবাসের অ্যাকাউন্টে। অ্যাকাউন্ট নাম্বার- ১৫০১২০৪৮৪০৫৪৫০০১।

পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ

পড়াশোনা এবং জীবনযাত্রার যাবতীয় খরচ মিলে সুইডেনের উচ্চশিক্ষা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। বিষয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষে অধ্যয়ন ফি বাবদ খরচ হতে পারে প্রতিবছর ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ক্রোনা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩৬ থেকে ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৪ টাকার সমতুল্য। এর মধ্যে ব্যবসা ও স্থাপত্যের কোর্সে খরচ সবচেয়ে বেশি। অপরদিকে সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক কোর্স ফি সর্বনিম্ন। এ দুয়ের মাঝে প্রযুক্তিভিত্তিক প্রোগ্রাম ও ন্যাচারাল সায়েন্স কোর্সের মূল্য বছরে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার ক্রোনা। এই পরিমাণ প্রায় ১৪ লাখ ৭ হাজার ৬৫৫ থেকে ১৭ লাখ ৯১৬ টাকার সমান।

স্কলারশিপের সুবিধা

এখানকার ব্যয়বহুল অধ্যয়ন এবং জীবনযাত্রার অর্থ সঙ্কুলানের উৎকৃষ্ট মাধ্যম হলো স্কলারশিপগুলো। যেমন- মেলবোর্ন ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারগ্রাজুয়েট স্কলারশিপ স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এখানে প্রথম বছরের জন্য ১০ হাজার ডলার (৮ লাখ ১৮ হাজার ৫০৩ টাকা) অধ্যয়ন ফি ছাড় পাওয়া যায়।

মোনাশ ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ স্কলারশিপ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরতদের জন্য। এখানে প্রোগ্রামের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেডিট পয়েন্ট নির্ধারিত থাকে, যেটি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত শতভাগ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

ইউটিএস ভাইস-চ্যান্সেলরের ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের ৫০ শতাংশ ব্যয়ভার গ্রহণ করে থাকে।

গ্লোবাল একাডেমিক এক্সিলেন্স স্কলারশিপে (ইন্টারন্যাশনাল) প্রতিটি অনুষদে অসামান্য একাডেমিক ফলাফল অর্জনকারীদের অধ্যয়ন খরচ থেকে ৫০ শতাংশ মওকুফ করা হয়।

খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ

সুইডেনে পড়াশোনার জন্য রেসিডেন্স পারমিট লাভের মাধ্যমে অধ্যয়নের পাশাপাশি খ-কালীন কাজের অনুমতিও পাওয়া যায়। আলাদা করে আর ওয়ার্ক পারমিটের দরকার পড়ে না। এমনকি অন্যান্য দেশের মতো এখানে কাজের জন্য কোনো ধরাবাঁধা সময়সীমা নেই।

সুইডেনে খণ্ডকালীন চাকরি করে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০০ ক্রোনা (৪ হাজার ৬৯২ টাকা) পর্যন্ত আয় করা যায়। 

এই হারে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করে মাসিক ৩২ হাজার ক্রোনা (৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩৭৫ টাকা) পর্যন্ত উপার্জন করা যেতে পারে। এটি ছাত্রাবস্থায় বাজেট পরিচালনার জন্য এক বিরাট সাপোর্ট। শুধু নিত্যদিনের জীবনযাত্রার ব্যয়ভার সামলানো নয়, এর মাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতাও অর্জিত হয়। তা ছাড়া ভবিষ্যতে পূর্ণকালীন চাকরির জন্য নেটওয়ার্কিংয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই স্বল্পকালীন কাজগুলো।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫