Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

দীপু মনি-মহিবুলের নামে দুর্নীতি, পদায়ন বৈষম্যে ৪০তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডাররা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ২২:৩৬

দীপু মনি-মহিবুলের নামে দুর্নীতি, পদায়ন বৈষম্যে ৪০তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডাররা

শিক্ষা ভবন। ফাইল ছবি

বিভিন্ন সরকারি কলেজে পদায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন ৪০তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৭৪৮ কর্মকর্তারা, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দাবি, তদানীন্তন দুই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নামে চালানো ‘দুর্নীতি’-তে তারা পদায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রবিবার (২০ অক্টোবর) বৈষম্য নিরসনের দাবিতে বিসিএস ৪০তম ব্যাচের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারেরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) শিক্ষা ভবনে ভীড় করেন। 

এসব শিক্ষা কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে দাবি করেন, পদায়নের ক্ষেত্রে আমাদের উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি কলেজে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু টাকা নিয়ে ৪১তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়াদের বিভাগ ও জেলা সদরের কলেজগুলোতে পদায়ন দেন। একইভাবে পরের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তার বাবার নামে করা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনে সরাসরি ডেনেশন নিয়ে তাদের একইভাবে বিভাগ ও জেলা সদরের কলেজগুলোতে পদায়ন দেন। 

শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা আরও বলেন, ‘নিয়ম অনুসারে আমরা চাকরির দুই বছর হওয়ার আগে বদলির আবেদন করতে পারি না। আমাদের চাকরির দুই বছর হবে আগামী ৪ ডিসেম্বর। কিন্তু ৪১ তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পদায়নের ফলে জেলা ও বিভাগীয় শহরের কলেজগুলোতে খুব বেশি পদ খালি নেই। যে কয়েকটি পদ আছে সেগুলোতেও ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়াদের পদায়নের প্রক্রিয়া চলছে। তাই ৪৩তম বিসিএস থেকে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়াদের পদায়নের আগে আমরা বদলি হওয়ার সুযোগ চাই।’

৪০তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ আল আসাদ স্বাক্ষরিত এক স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা ৪০ তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ব্যাচ এক নিষ্ঠুরতম বৈষম্যের শিকার হয়েছি। বিশেষভাবে বলতে গেলে পূর্ববর্তী সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এই কাজ প্রত্যক্ষভাবে বাস্তবায়ন করেছিলেন। ৪০ তম ব্যাচের ৭৪৮ জন কর্মকর্তার প্রায় ৯৯ শতাংশের পদায়ন হয়েছে বিভিন্ন প্রত্যন্ত উপজেলার এবং ইউনিয়ন টেরিটরির সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া কলেজগুলোতে। এই পদায়নের মূল ভূমিকা ছিল তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করছি, অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের পরবর্তী ব্যাচের আনুমানিক ৫৫ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে জেলা পর্যায়ের সরকারি কলেজগুলোতে। যা আমাদের জন্য বৈষম্যমূলক। আমাদের পদায়নের পরবর্তী সময়ে তৎকালীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় আমাদেরকে একাধিকবার জানিয়েছিলেন যে, পরবর্তী ব্যাচগুলোর পদায়নও উপজেলায় দিয়ে পর্যায়ক্রমে সিনিয়র ব্যাচগুলোতেকে জেলা পর্যায়ে বদলি হওয়ার সুযোগ দেয়া হবে। বাস্তবে তা হয়নি, বরং পরবর্তী ব্যাচকে জেলায় পদায়ন দেয়া হয়েছে। 

তারা আরও বলেন, ৪০ তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের উপর করা সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ব্যাচটির ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে উপজেলা শহরে। ৩১ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে ইউনিয়ন টেরিটরিতে। অর্থাৎ শতকরা ৯৮ ভাগের বেশি কর্মকর্তার পদায়ন উপজেলা এবং ইউনিয়ন টেরিটরিতে হয়েছে। শতকরা ৪৯ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে নিজ উপজেলা থেকে ৩০০ কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে। ২৪ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে ২০০-৩০০ কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে। 

স্মারকলিপিতে বলা হয়, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি এবং তার ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপু শিক্ষা ক্ষেত্রে বদলি পদায়নের এক বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন। সেই সিন্ডিকেটের সময়েই আমাদের পদায়ন হয়। যাতে বদলির সময় হলেই আমরা দূরবর্তী কর্মস্থল থেকে বদলি হওয়ার জন্য ঐ সিন্ডিকেটের শরণাপন্ন হই। কিন্তু পরবর্তী শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সময়ে পরবর্তী ব্যাচের পদায়ন হয় জেলা পর্যায়ে, যা আমাদের ব্যাচের জেলা পর্যায়ে বদলির সুযোগ অনেকাংশে সংকুচিত করেছে, কারণ পদ সীমিত।

তাই ৪০তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা ৪৩তম ব্যাচের পদায়নের আগেই বদলির সুযোগ দাবি করেন। তাদের দাবি, ৪৩তম ব্যাচ পদায়ন হয়ে গেলে তাদের জন্য বদলি হয়ে আসার কোন পদই থাকবে না। 

এদিকে, গতকাল রবিবার বিকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্বে থাকা কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীমের সঙ্গে ৪০তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা দেখা করেন। তখন অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম তাদের পদায়নের ব্যাপারে ‘দেখবেন’ বলে আশ্বাস দেন। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫