
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মশাল মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা সংবিধান বাতিল এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই মিছিল আয়োজিত হয়।
আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়টির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন ভারতে’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্রলীগের ঠিকানা’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘এক হয়েছে সারা দেশ, ছাত্রলীগের দিন শেষ’, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ, করতে হবে’, ‘এক দুই তিন চার, ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস ছাড়’, ‘স্বৈরাচারের দোসরেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘মুজিববাদ নিপাত যাক, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, যারা স্বৈরাচারের দোসর এবং স্বৈরাচারকে ফিরিয়ে আনার জন্য নানা চেষ্টা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধেই আজকের এই মশাল মিছিল। জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল সেসব ছাত্রলীগ-যুবলীগ কিংবা আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যেগুলো রয়েছে তারা যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করতে না পারে সেই দাবি তারা জানাচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা সমাবেশে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই দেশে আবার আওয়ামী লীগ নানা উপায়ে ফেরত আসার চিন্তা করছে। এটি তারা করার সাহস পাচ্ছে, কারণ আমাদের ছাত্র-জনতার যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল সেটি ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় আবার স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগ আমাদের রাষ্ট্র দখল করে নেবে। আওয়ামী লীগের দোসর এ ছাত্রলীগের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকে কোনোভাবেই আমাদের ক্যাম্পাসগুলোতে আমরা মেনে নেব না। তারা গত ১৫ বছর যা যা করেছে তা কোনোভাবেই ছাত্ররাজনীতি ছিল না। তাই ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন ছাত্ররাজনীতির সূচনা হবে।’
আরেক সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের গুন্ডারা জঙ্গি স্টাইলে আমার শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের ওপর বিভিন্ন জায়গায় হামলা করছে। তারা যেহেতু জঙ্গিপনা করছে তাই তাদের এই দেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। ছাত্রলীগকে এই বাংলার শিক্ষার্থী সমাজ বহু আগেই লাল-কার্ড প্রদর্শন করেছে এবং নিষিদ্ধ করেছে। এখন যেহেতু তারা জঙ্গি স্টাইলে আমার শিক্ষার্থী ভাইদের ওপর হামলা করছে, তাই তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্তের সবচেয়ে বড় অংশ এই রাষ্ট্রপতি চুপ্পুকে (মো. সাহাবুদ্দিন) অনতিবিলম্বে জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।’
সমাবেশে সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, ‘এই মুজিববাদ যেখানে প্রবেশ করেছে সেই জায়গাকে পচিয়ে বের হয়েছে। এই মুজিববাদ ৭২’ এর সংবিধানকে কলুষিত করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ফ্যাসিস্টদের দালালরা এই দেশে থাকতে পারবে না। শেখ হাসিনার বিচার এই বাংলার জমিনে হবে। এই ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা একটা নতুন সংবিধান, একটি নতুন বাংলাদেশ। এ সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার দাবি জানান।
সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আমরা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের কবর দিলেও এখনও তাদের মূলোৎপাটন করতে পারিনি। এই বাংলার মাটিতে এখনও ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। মো. সাহাবুদ্দিন, যিনি স্বৈরাচারের দোসর ছিলেন আমরা তার পদত্যাগের দাবি জানাই। অন্যথায় এই ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে আরও কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।’
এ সময় তিনি গত ১৬ বছরে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পদচ্যুত করার জোর দাবি জানান।
আরেক সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘মুজিববাদী ছাত্রলীগ যেদিন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সেদিনই কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছিল। প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই মুজিববাদী ছাত্রলীগ এ দেশের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ছাত্রলীগের ইতিহাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলে পড়ার ইতিহাস। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে এ দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে।’