আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ছাত্রলীগের নিষিদ্ধের খবর প্রকাশিত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন।

গতকাল বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা আনন্দ মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর থেকে টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে জড়ো হন। পরে সেখানে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা।

সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, আজকে আমাদের জীবনের অন্যতম আনন্দের একটা দিন। ছাত্রলীগ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো কেউ ছিল না। এই ছাত্রলীগ ১৫ জুলাই আমাদের উপর হামলা করেছে, সারাদেশে তারা অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে শহীদ করেছে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই ছাত্রলীগের মত সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য।

আরেক সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, একজন চারণ কবি বলেছিল ছাত্রলীগ নাকি ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু আজকে তারা কোথায়? আজকে খুনি হাসিনাও নাই, চারণ কবিও নাই, ছাত্রলীগও নাই। তারা বলেছিল তারা নাকি আমাদের ৭ মিনিটে আউট করবে। আজকে আমরা দেখেছি, তারা মধুর ক্যান্টিনের সামনে ৪৬ সেকেন্ডে আউট হয়ে গেছে। তারা রাজপথ থেকে সৃষ্টি হয়ে রাজপথ থেকে পালিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কোনো মুজিববাদের কোন ঠিকানা হবে না। ২৪ বিপ্লব সবাইকে দেখিয়েছে মুজিববাদ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কাছে সত্য ইতিহাস গোপন করে রেখেছিল। কিন্তু এখন তারা আর সেটা পারবে না। আমরা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করেছি। এখন দেশের সকল সাধারণ মানুষ লুকায়িত সত্য ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।

এসময় শিক্ষার্থীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণও করা হয়। এছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারাদেশ জুড়ে আনন্দ মিছিল করার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রিফাত রশিদ।

এসময় শিক্ষার্থীরা ‘এই মুহূর্তে খবর এলো, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হলো’; ‘মুহূর্তে খবর এলো, সন্ত্রাসী লীগ নিষিদ্ধ হলো’; ‘হৈ হৈ রৈ রৈ, সন্ত্রাসলীগ গেলি কই’; ‘এই মুহূর্তে খবর এলো, ক্যাম্পাস সন্ত্রাসমুক্ত হলো’ - ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এর আগে ছাত্রলীগকে আজীবন ক্যাম্পাস থেকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তনের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে মলচত্বর-হল পাড়া-সূর্য সেন হল-মুহসীন হল হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এক স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তে আনন্দে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে এ বিষয়ে গেজেট জারি করে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়। এতে সই করেন জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ এর সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।