Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

সাবজেক্ট ম্যাপিং, শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাই হলো কি

Icon

এহতেশাম শোভন

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:১৮

সাবজেক্ট ম্যাপিং, শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাই হলো কি

প্রতীকী ছবি।

২০২৪ সালের অনুষ্ঠিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হয় গত ১৫ অক্টোবর। আর এতে সব শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সেই হিসেবে এবার পাসের হার কমেছে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ কম। 

চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের কারণ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাকি পরীক্ষা পিছিয়ে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন সরকার। তবে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর পরীক্ষা এক মাস পিছিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন সময়সূচিতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার বাকি পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করলেও ২০ আগস্ট কিছু শিক্ষার্থীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তা বাতিল করে দেয় শিক্ষা বিভাগ। এই সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ পরীক্ষার্থীর মতের প্রতিফলন কিনা, তার কোনো বিচার বা জরিপ করা হয়নি। 

বাতিলকৃত পরীক্ষাগুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। যেসব বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর পূর্ণ নম্বরের ভিত্তিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়নি সেগুলোর ফলাফল তৈরি হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে। এসএসসিতে ওই বিষয়ে পাওয়া নম্বর পরীক্ষা না দিয়েই এইচএসসিতে পেয়ে গেছেন তারা। ফলে সবার প্রত্যাশা ছিল এবার পাসের হার বাড়বে। তবে ঘটনা ঘটেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত বছর সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরও যে গড় পাসের হার ছিল, এবার তা আরও কমেছে। স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই ফলাফলে আদৌ কি সন্তুষ্ট হতে পেরেছে? 

এসএসসি বা পূর্ববর্তী পরীক্ষায় যারা ভালো নম্বর পেয়েছিল, ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ বা বিষয় সমন্বয়ের কারণে এবারও তারা ভালো নম্বর পেয়েছে। এর ফলে গতবারের চেয়ে এবার ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু এতে করে তারা কতটা মূল্যায়ন পাবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। 

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের মোট সাতটি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে হয়। তার মধ্যে চারটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। বাকি তিনটির পরীক্ষা বাতিল করা হয়। অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ইংরেজি ও আইসিটির মতো আবশ্যিক বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ফেলের হার বেশি। যে বোর্ডগুলোতে এ দুটি বিষয়ে বেশি ফেল করেছে, সেখানে পাসের হারও কমেছে। এতে নিম্নমুখী হয়েছে গড় পাসের হারও।

পাসের হার বা জিপিএ-৫ দিয়ে আদৌ শিক্ষার মানের প্রকৃত অবস্থা বোঝা সম্ভব? আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতি এখনও উৎকৃষ্ট মানে পৌঁছাতে পারেনি। এখন পর্যন্ত পরীক্ষাগুলোয় গতানুগতিক ধারায় প্রশ্ন করা হয়। শিক্ষার্থীর প্রকৃত জ্ঞান ও দক্ষতা এভাবে পুরোপুরি যাচাই করা সম্ভব নয়। দেখা যাচ্ছে, স্কুল-কলেজ ও সরকারের কাছে ফলাফল মানে হলো পাসের হার। আর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে ফলাফল মানে জিপিএর মান। পরীক্ষা কেন নেওয়া হয় কিংবা এর উদ্দেশ্য কী, সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হয় না। 

প্রতিটি শ্রেণির বা স্তরের শিক্ষাক্রমে কিছু যোগ্যতা বা দক্ষতা নির্ধারণ করা থাকে। একে শিখনফলও বলা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী একেকটি বিষয়ে কতটুকু দক্ষতা অর্জন করবে, তা ওই স্তরের বিস্তারিত শিক্ষাক্রমে নির্ধারিত আছে। স্কুল-কলেজের পরীক্ষা বা বোর্ডের চূড়ান্ত পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হয় শিক্ষার্থী সেই যোগ্যতার কতটুকু অর্জন করল। কোনো বিষয়ে পরীক্ষা না নেওয়া হলে বোঝা সম্ভব নয় ওই বিষয়ে শিক্ষার্থী কাক্সিক্ষত দক্ষতার কতটুকু অর্জন করেছেন। পূর্বের ফলাফল দিয়ে এটি বোঝা যাবে না। 

ফল তৈরির এই ‘অটো’ প্রক্রিয়া অটো পাসের মতোই বিভ্রান্তির। কারণ উচ্চ মাধ্যমিকের কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থীর অবস্থান কী, তা কেবল পরীক্ষা নিয়েই বোঝা সম্ভব। এই ফলাফল উচ্চ শিক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেসব বিষয়ে পরীক্ষা ছাড়াই নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেসব বিষয়ে শিক্ষার্থীর প্রকৃত অবস্থা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। 

একেকটি শ্রেণিতে বা স্তরে অর্জিত দক্ষতার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী শ্রেণি বা স্তরে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। সঙ্গত কারণেই উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল ভর্তি পরীক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষায় প্রভাব ফেলে। এবার এইচএসসির নম্বরপত্রে দেখানো সব নম্বর উচ্চ মাধ্যমিকের জ্ঞানের বা দক্ষতার প্রকৃত প্রতিফলন ঘটাবে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থী বাড়তি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও বুয়েট, মেডিক্যাল বা বিশ্ববিদ্যালয়কে ন্যূনতম জিপিএ বা নম্বর নির্ধারণ করতে খানিক দ্বিধায় ফেলবে। 

ভবিষ্যতে পরীক্ষা ছাড়া নম্বর দেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে আরও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। আবার এ ধরনের দাবি করার আগে শিক্ষার্থীদেরও ভাবতে হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫