
চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
চেক প্রজাতন্ত্র ইউরোপে উচ্চশিক্ষার জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প। কিউএস র্যাংকিংয়ে ২৪৮ নম্বরে রয়েছে সুপরিচিত চেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া মাসারিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৪০০ নম্বরে, চেক টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির অবস্থান ৪৫৪, এবং কেমিস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি, প্রাগ ৫৫৬-তে। দেশটি ৯৯ শতাংশ শিক্ষার হার এবং মেধাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পরিণত হয়েছে শিক্ষার স্বর্গভূমিতে।
সেরা বিষয়গুলো
মেডিসিন ও হেলথকেয়ার, ব্যবসা ও অর্থনীতি, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি ও প্রকৌশল।
উচ্চশিক্ষার জন্য পড়ার পূর্বশর্ত
এখানকার কোর্সগুলোতে পড়ার জন্য প্রাথমিক শর্ত হলো পূর্ববর্তী প্রাসঙ্গিক একাডেমিক ডিগ্রিগুলোতে উত্তীর্ণ হওয়া। যেমন আন্ডারগ্রাজুয়েশনের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক, ডিপ্লোমা বা সমমানের একাডেমিক পরীক্ষার সনদ থাকা প্রয়োজন। মাস্টার্সের জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরাল স্টাডি প্রোগ্রামের জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দরকার হয়।
আবেদনের উপায়
ভর্তির জন্য আবেদনের মৌসুম শুরু হয় সাধারণত ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে। অনলাইনে ভর্তির আবেদনের জন্য প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব পোর্টাল। সেখানে কাঙ্ক্ষিত কোর্স খুঁজে বের করার জন্য রয়েছে যাবতীয় তথ্য।
অনলাইনে আবেদনের সময় কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হতে পারে। ইলেক্ট্রনিক আবেদন সফলভাবে সম্পন্ন করার পর তা প্রিন্ট করতে হবে। অতঃপর তা সই করে সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকযোগে পাঠাতে হবে।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ডিপ্লোমা বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণের সত্যায়িত অনুলিপি, সনদপত্র এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ইংরেজির পরিবর্তে বাংলায় হলে সেগুলো চেক বা ইংরেজিতে অনুবাদ করে নিতে হবে, প্রশাসনিক ফি প্রদানের প্রমাণ, ভর্তি প্রক্রিয়াকরণ ফি প্রদানের প্রমাণ, মোটিভেশন লেটার, ২ থেকে ৩টি রেফারেন্স লেটার, সিভি বা পোর্টফোলিও, বৃত্তি পেলে বা অন্য কেউ পড়াশোনার খরচ বহন করলে তার প্রমাণ, ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষা (সাধারণত পিটিই একাডেমিক, টিওইএফএল ও আইইএলটিএস স্কোর দেখা হয়)।
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন পদ্ধতি
অফার লেটার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভিসার কাজ শুরু করে দিতে হবে। চেক প্রজাতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি ডি-টাইপ ক্যাটাগরিই হচ্ছে স্টুডেন্ট ভিসা, যেখানে ৯০ দিনেরও বেশি সময় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। ভিসার মেয়াদ থাকে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত; এরপর ভিসা আবার রিনিউ করতে হয়।
আবেদনের জন্য https://frs.gov.cz/en/forms-and-documents/- এই লিংকে যেয়ে অনলাইন আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া ফর্ম ডাউনলোড করে কম্পিউটারের মাধ্যমে অথবা প্রিন্ট করে হাতে লিখেও পূরণ করা যেতে পারে। ফর্মের সব তথ্য নির্ভুলভাবে প্রদানের পর সব শেষে সই করতে হবে। ইলেক্ট্রনিকভাবে এই আবেদনের সময় ভিসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সঙ্গে থাকা দরকার।
ভিসার আবেদনের জন্য দরকারি নথিপত্র
চেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ভর্তির অফার লেটার। দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠাসহ একটি বৈধ পাসপোর্ট, যার মেয়াদ থাকতে হবে চেক প্রজাতন্ত্রে উপস্থিত হওয়ার দিন থেকে ন্যূনতম ৩ মাস পর্যন্ত। সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি। দেশটিতে থাকার জন্য আর্থিক তহবিলের প্রমাণপত্র ( কমপক্ষে ৭৮ হাজার ২৫০ কোরুনা বা প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৭ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট)। মেডিক্যাল রিপোর্ট, আবাসন নিশ্চিতকরণের প্রমাণ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (অফিসিয়াল রাবার স্ট্যাম্পসহ চেক ভাষায় অনুবাদ করা হতে হবে)। চেক প্রজাতন্ত্রে পৌঁছার দিন থেকে কমপক্ষে ৯০ দিনের জন্য ভ্রমণ, চিকিৎসা বীমার প্রমাণপত্র, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও পাসপোর্ট ছাড়া আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত সমস্ত নথি চেক ভাষায় হতে হবে। পাসপোর্ট ও ছবি ব্যতীত কোনো নথি ১৮০ দিনের বেশি পুরনো হতে পারবে না।
ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি
ভিসার ফি ২ হাজার ৫০০ কোরুনা (প্রায় ১২ হাজার ৪৯২ টাকা )। এই ভিসা প্রক্রিয়ার সমুদয় কার্যক্রমে সাধারণত ৬০ থেকে ৯০ কর্ম দিবস লাগে। আবেদন মঞ্জুর হয়ে গেলে ই-মেইলের মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ জানানো হবে।
পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
ইউরোপীয় দেশটিতে অধ্যয়ন খরচ গড়পড়তায় ২ হাজার ৭০০ থেকে ৫ হাজার ইউরো বা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯৮৯ টাকা। তবে প্রকৌশল, মেডিসিন ও ডেন্টিস্ট্রির মতো বিষয়গুলোতে ইউনিভার্সিটি ভেদে আরও বেশি খরচ হয়ে থাকে। মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য সাধারণত প্রতিবছর ৪ থেকে ১০ হাজার ইউরো খরচ হতে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই পরিমাণটি ৫ লাখ ৮ হাজার ১৩১ টাকা থেকে ১২ লাখ ৭০ হাজার ৩২৮ টাকার সমান। জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে আবাসন, খাবার এবং পরিবহন সব মিলিয়ে সাধারণত প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ (প্রায় ৩৮ হাজার ১১০ টাকা) থেকে ৭৫০ ইউরো (প্রায় ৯৫ হাজার ২৭৫ টাকা) পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে।
স্কলারশিপের সুবিধা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের মতো এখানেও আছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত বৃত্তির ব্যবস্থা। তার মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত উপায়টি হচ্ছে ইরাস্মাস মুন্ডুস, যেটি শুধু মাস্টার্সের জন্য দেওয়া হয়। এখানে ১ থেকে ২ শিক্ষাবর্ষের ব্যয়ভারের জন্য স্পন্সরশিপ পাওয়া যায়।
সিইইপিইউএস বা সিপাস প্রোগ্রাম একটি সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম। এর রয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য ইউনিভার্সিটির নেটওয়ার্ক। স্কলারশিপটির উদ্দেশ্য এই ইউনিভার্সিটিগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা হলেও, অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাও মেধার ভিত্তিতে এটি অর্জন করতে পারে। এটি মূলত ৩ থেকে ১০ মাসের অধ্যয়ন খরচ বহন করে। এ ছাড়া রয়েছে মাস্টার্স বা পিএইচডির জন্য চেক সরকার বৃত্তি, যা প্রায় পুরো অধ্যয়নের ব্যয়ভার বহন করে।
খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ
স্নাতক শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা চাকরি খোঁজা বা ব্যবসা শুরুর জন্য অতিরিক্ত ৯ মাসের রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারে। দেশ জুড়ে কাজের বৈচিত্র্য এবং প্রতি ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভ্যাকেন্সি থাকায় এই সময়টুকুর মধ্যে গ্র্যাজুয়েটরা নিজেদের আয়ের ব্যবস্থা করে নিতে পারে। এ ছাড়া এখানে টানা ৫ বছর বৈধভাবে বসবাসের পর স্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করা যায়।