আইএইচটি ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:২৮

আইএইচটি ক্যাম্পাস। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
সংঘর্ষ এবং মাদক সম্পৃক্ততার ঘটনায় ৯ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পর দিনই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হল বরিশালের ইনস্টিটিউট অব হেলথ্ টেকনোলজি (আইএইচটি) ক্যাম্পাস।
আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মানস কৃষ্ণ কুন্ডু এক চিঠির মাধ্যমে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা দেন। সেই সাথে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হোটেল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।
অভিযোগ উঠেছে ৯ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপি নেতা অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে আসার পর রহস্যজনক কারণে আইএচইটি ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপি নেতার ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও ক্যাম্পাস বন্ধের বিষয়ে কোন হুমকি বা চাপ প্রয়োগের কথা অস্বীকার করেছেন আইএইচটি অধ্যক্ষ মানস কৃষ্ণ কুন্ডু।
তবে আইএইচটির একাধিক শিক্ষার্থী এবং একাডেমিক শাখার একাধিক স্টাফ নিজেদের নাম প্রকাশ না করে বলেন, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে হুমায়ুন কবির এবং মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। এসময় মাদক সম্পৃক্ততা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রত্ব স্থগীত এবং ছাত্রাবাস থেকে বহিষ্কার হওয়া ৯ শিক্ষার্থীর শাস্তি বাতিলের জন্য অধ্যক্ষকে চাপ সৃষ্টি করেন। তা না হলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে হুঁশিয়ার করেন।
সূত্রগুলো আরও জানায়, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির ও ছাত্রদল নেতা রেজা ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার পরপরই ২৭ নভেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আইএইচটি ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা দিয়ে নোটিশ বোর্ডে চিঠি লাগিয়ে দেয়া হয়। এ খবরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এমনকি হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে তাদের পরীক্ষা শুরুর কথা। সেভাবে প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তারা। ক্যাম্পাসের পরিবেশও শান্ত রয়েছে। কিন্তু সেই মুহূর্তে হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, আমি কোনো চাপ সৃষ্টি করিনি। ক্যাম্পাসটি আমার বাসার পাশে। তাই অধ্যক্ষকে অনুরোধ জানাতে গিয়েছিলাম যাতে ঘটনাটি উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার জন্য। তাছাড়া আমি যাওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষ আইএইচটি বন্ধ ঘোষণা করেছে।
তাছাড়া বিএনপি ও ছাত্রদল নেতার চাপ সৃষ্টির কথা অস্বীকার করেছেন আইএইচটি অধ্যক্ষ ডা. মানস কৃষ্ণ কুন্ডু। তিনি বলেন, বরিশাল মহানগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির মঙ্গলবার দুপুরের আগে ক্যাম্পাসে আসেন। তিনি ৯ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তি প্রত্যাহার করে বিষয়টি সমঝোতার প্রস্তুাব দিয়েছেন। তারা চাপ সৃষ্টি করেননি। আমি তাদের জানিয়েছি, এটা সমাধানের সুযোগ নেই। এছাড়া অন্য কিছু নয়।
হঠাৎ করে ক্যাম্পাস বন্ধের কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ৬ দফা আন্দোলন নিয়ে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কিছুদিন আগে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় গত ২৫ নভেম্বর ৯ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই ক্যাম্পাস কিছুটা উত্তপ্ত এবং থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। ২৫ নভেম্বর রাতে ঝামেলাও হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের একটা অংশ ছাত্রাবাসে আসতে পারেনি। এ বিষয়ে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। ক্যাম্পাসে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প দিতে বলেছিলাম। পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া ছয় দফা আন্দোলনের কারণে আগেই পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, আইএইচটির ছাত্রত্ব স্থগিত এবং হল থেকে বহিষ্কার হওয়া ৯ শিক্ষার্থী ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল। গত ৫ আগস্টের পর মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রেজার ছাত্রছায়ায় থেকে ছাত্রদলে নাম লেখায়। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীদের ছয় দফা আন্দোলনে বিরোধিতা করে আসছিল অভিযুক্তরা।