Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

জাবিতে নতুন হল: নিশ্চিত হয়নি শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত সেবার মান

Icon

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৩

জাবিতে নতুন হল: নিশ্চিত হয়নি শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত সেবার মান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন হল। ছবি- জাবি প্রতিনিধি

শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নির্মিত হয়েছে ৬টি হল। শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলগুলোতে সুন্দর পরিবেশে বসবাসের প্রত্যাশা ছিল শিক্ষার্থীদের। কিন্তু, বাস্তবতা ভিন্ন। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, তাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণ মেলাতে অনেকটাই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হলগুলোর ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানারকম অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। 

সর্বশেষ, এ বছরের ১৮ ও ১৯ অক্টোবর বীরপ্রতীক তারামন বিবি হল ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এর আগেও চালু করা হয়েছে ৪টি নতুন হল। নতুন হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরার অভাব, ডাইনিং ব্যবস্থাপনা না থাকা, নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, প্রকল্প পরিকল্পনায় ত্রুটির কারণে বর্ষার সময় রুমে পানি চলে আসা, নজরুল হলে টেবিল ল্যাম্প না দেওয়াসহ নানাবিধ অভিযোগ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও, শহীদ রফিক-জব্বার হল থেকে নবনির্মিত দুটি হল পর্যন্ত রাস্তা নির্মানের কথা থাকলেও সেটি তৈরির কোন পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। খানাখন্দভরা এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা সম্ভব হয় না। ফলে হল থেকে একাডেমিক ভবনগুলোতে যেতে অনেকটা রাস্তা ঘুরতে হয়। 

কাজী নজরুল হলের ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী এস এম আব্দুল্লাহ আলামিন বলেন, নতুন হলে এখনো ডাইনিং চালু হয়নি। হলে ক্যান্টিন থাকলেও সেখানে মানসম্মত খাবার নেই। রান্না করা খাবারে ময়লা পাওয়া যায়। খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি এবং পরিমাণে অনেক কম দেওয়া হয়। 

কাজী নজরুল হলের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী এইচ. এম অভি বলেন, প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের নির্দিষ্ট রুমগুলোর (A ব্লকের ১ এবং ১০ নম্বর রুম এবং C ব্লকের ২১ এবং ৩০ নম্বর রুম) নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। হল প্রশাসন এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলতার অভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি রয়েছে। ক্যামেরা স্থাপনের ত্রুটি রয়েছে। মাঝের বিমের সাথে ক্যামেরা লাগানোর ফলে শুধুমাত্র একদিকের সার্ভিলেন্স সম্ভব হচ্ছে। ফলেকিছু রুম নজরদারির বাইরে রয়ে যাচ্ছে। হলে চুরি বা অঘটন ঘটলে এর দায় কার এবং উদ্ধার কার্য পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যাবে।

তারামন বিবি হলের মেহেরিন আফরিন বলেন,  হলে সুলভমূল্যে খাবার পাওয়া যায় না। খাবারের দাম অনেক বেশি হলেও পরিমাণে খুবই কম। এছাড়াও ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে হলের শিক্ষার্থীদের কক্ষ ও মালামালের নিরাপত্তার দায় নিতে লিখিতভাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তারামন বিবি হল প্রশাসন। পানির ফিল্টার না থাকায় সুপেয় পানি পাওয়া যায় না। সবগুলো লিফট চালু থাকে না।

নাজমুস সাকিব বলেন,  অন্যান্য নতুন হলে ৬টি লিফট থাকলেও নজরুলে ৫টি লিফট দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে প্রায় সময়ই ২টি লিফট বন্ধ থাকে। এতে করে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়।

কাজী নজরুল হলের ফরহাদ আহমেদ ফিরোজ বলেন, ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার না করায় প্রায়সময়ই এগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে থাকে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এছাড়াও আগে উদ্বোধন হওয়া হলগুলোতে টেবিল ল্যাম্প দেওয়া হলেও নজরুল হলের ক্ষেত্রে তা হয়নি।

২১ নং হলের শিক্ষার্থী ওয়ালি উল্লাহ আল মাহদি বলেন, প্রশাসনের তদারকির অভাবে যত্রতত্র সাইকেল ও বাইক পার্কিং করা হয়। সিঁড়ির কিছু দরজার হাতল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চেয়ার-টেবিলে ফাটল ধরেছে। এগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।  

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের শিক্ষার্থী তারেক আহমেদ বলেন, হলের ডাইনিং চালু করা প্রয়োজন। প্রতিটি ফ্লোরে সুপেয় পানির ফিল্টার না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আমাদের হলে থেকে শহিদ রফিক-জব্বার হল পর্যন্ত রাস্তাটা চলাচলের উপযোগী করা প্রয়োজন। 

অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল্লাহ হেল কাফী বলেন, গ্যাস সাপ্লাই না থাকার কারণে ডাইনিং চালু করা সম্ভব হয়নি। হলে মাত্র দুজন সুইপার এবং একজন ক্লিনার। লোকবল কম থাকায় নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা সম্ভব হয় না।

লিফটের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি লিফট কম দেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আরেকটি লিফট চালু হবে। প্রয়োজন সাপেক্ষে পাঁচটি লিফট চালানো হয়। আবার মাঝে মাঝে দুটা বন্ধ রাখা হয়। 

সাদ বন্ধের  বিষয়ে  করলে তিনি বলেন, অফিস টাইমে হলের সাদ খোলা রাখা হয়।  অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে রাতের বেলা সাদ বন্ধ রাখা হয়।

বীর প্রতিক তারামন বিবি হলের প্রাধ্যক্ষ ড. আবেদা সুলতানা বলেন, শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে আমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত অনেক অসঙ্গতি ছিল যেগুলো আমি নিজ উদ্যোগে সমাধান করেছি। গ্যাস সাপ্লাই না থাকায় ডাইনিং চালু করা যায়নি। তার বিকল্প হিসেবে ক্যান্টিন চালু করা হয়েছে এবং সেটির খাবারের মান ও ব্যবস্থাপনা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছি। শিক্ষার্থীবান্ধব একটি হল উপহার দেওয়ার জন্য আমি আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। 

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর লুৎফুল ইলাহি বলেন, লোকবল কম এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু ত্রুটি থাকায় ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। আমি ইতোমধ্যেই লোকবল নিয়োগের বিষয়ে প্রশাসনকে তাগাদা দিয়েছি এবং প্রকল্পের ত্রুটি সমাধানের জন্য দায়িত্বরতদের জানিয়েছি। 

অভিযোগের বিষয়ে ২১নং হলের প্রভোস্ট ড. বোরহান উদ্দিন বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশেষ বিবেচনায় গ্যাস লাইন দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি। যদি গ্যাস লাইন দেওয়া হয় তাহলে ডাইনিং চালু করা সম্ভব হবে। তবে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর হলে মেস সিস্টেম চালু করে  সাময়িক সমাধানের চেষ্টা করেছি।

এছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, হলের অভিযোগ বই আমি নিজে দেখি। যেকোনো অভিযোগ পেলে অনতিবিলম্বে সেটির সুরাহা করার চেষ্টা করে থাকি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫