প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ছাত্রদল কর্মীর বাধা দেয়ার চেষ্টা

জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৭

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে ‘হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’র মানববন্ধন। ছবি: জবি প্রতিনিধি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে ‘হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’র মানববন্ধনে এক ছাত্রদল কর্মীর বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী অনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী।
গত
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর ভবনে এক শিক্ষার্থীকে মারধর
করেন শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নারী শিক্ষককে
হিজাব নিয়ে কটূক্তি করেন শাখা ছাত্রদলের এক নেতা। এই
দুই ঘটনার প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার মানববন্ধনের
আয়োজন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রাইট সোসাইটি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা
জানায়, শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে ছাত্রদল নেতা অনিক আচমকা মানববন্ধকারীদের সামনে এসে ব্যঙ্গাত্মক সুরে ‘শিবির জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আক্রমণাত্মক আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে
ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা
করেন।
‘হিউমান
রাইটস সোসাইটি’র দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান কায়েস স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এতে বলা হয়, এই ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। এ ধরনের উস্কানিমূলক
আচরণ একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসের পরিবেশ, মানবাধিকারের মূল্যবোধ এবং শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের অধিকারকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে। এটি শুধু মানববন্ধনের পরিবেশ বিঘ্নিত করেনি, বরং সচেতন নাগরিকদের ন্যায্য দাবিকে অবমাননারও অপচেষ্টা।
জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কামরুজ্জামান কায়েস বলেন, সংগঠনের সদস্যদের আচরণে শৃঙ্খলা আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন এবং শিক্ষার পরিবেশ ও মানবাধিকারের প্রতি
শ্রদ্ধা বজায় রাখতে নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন।
এ বিষয়ে
হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ মাসুদ বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেই ‘শিবির’ ট্যাগ দেয়া হতো। জুলাই অভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশে সেই ফ্যাসিস্ট ঐতিহ্যকে ধারণ করে তারা মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করতে চায়। সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে করা মানববন্ধনে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে, ভবিষ্যতে আরও ভয়ানক রূপ নেবে তারা।
এ
বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী অনিক বলেন, ‘হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’ মানববন্ধনে আমি জানার জন্য গিয়েছিলাম- যে ওখানে কি
হয়েছে। কোন হুমকি বা চোখ রাঙ্গানো
হয়নি। বিষয়টি অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে
জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। কেউ যদি এমন কিছু করে- যেটা কারো মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করে তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
জবি
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, আমার কর্মীর এমন আচরণের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে লজ্জিত। আমাদের সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কিছু কোন্দল চলছে। পদবঞ্চিতরা আন্দোলন করছে, আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। দ্রুত সংকট সমাধানের চেষ্টা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল
হক বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। মারধরের পরের দিন আর সিন্ডিকেট থাকার
কারণে ভিসি স্যারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারিনি। আমরা এই
বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
মানববন্ধনে
বিশৃঙ্খলা ও ট্যাগিং দেওয়ার
ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ট্যাগিং রাজনীতি কাম্য নয়। এই বিষয়ে লিখিত
অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।