
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: জাবি প্রতিনিধি
জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছিল ছাত্রসংসদ কার্যকর করা। স্বৈরাচার পতনের ৫ মাস গেলেও ছাত্রসংসদ কার্যকর করতে না পারাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও বেশিরভাগ ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন। শিক্ষার্থীদের দাবি লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি পরিহার ও শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে অনতিবিলম্বে ছাত্রসংসদ কার্যকর করা উচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা চাই ছাত্রসংগঠনগুলো যেন জুলাইয়ের ২ হাজার শহিদ ও হাজার হাজার আহতের কথা স্মরণ রাখেন৷ তাদের রক্তের সাথে বেইমানি যেন না করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফায় ছিল, ছাত্রসংসদ কার্যকর করতে হবে। সেটার বাস্তবায়ন কোথায়? নাকি আবারও পেশি শক্তির মাধ্যমে জোর যার মুল্লুক তার নীতিতে সবাই চলতে চায়?
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সায়েম বলেন, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি থেকে এখনো আমরা পুরোপুরি বের হতে পারিনি তার অন্যতম প্রমাণ, ছাত্রসংসদ নির্বাচন এতদিন বিলম্বিত হওয়া।
জাবি শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক জহির উদ্দিন মোহম্মদ বাবর ছাত্রসংসদের বিষয়ে বলেন, আমরা সবসময় ছাত্র সংসদ কার্যকর রাখার পক্ষে। সকল ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রশাসন জাকসু নির্বাচন বিষয়ক একটি সাধারণ সভা করেছিলেন। সেখানে নির্বাচনের পূর্বে অনেকগুলো সংস্কারের দাবি আসে। প্রতিটা সংস্কার নিয়ে একেকটা কমিটি করা হয়। কমিটির রিপোর্টের পর সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল কমিটির রিপোর্ট প্রদানের পর সংস্কার করে নির্বাচনী তফসিল দিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি সমন্বয়ক তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে জাকসুর দাবিতে প্রশাসনের দোরগোড়ায় কড়া নেড়েছি। তারা বিভিন্ন অছিলায় গড়িমসি করেছেন। তবে আমরা এ বিষয়ে শক্ত অবস্থানে আছি। ছাত্রজনতার দাবি ও শহিদদের স্বপ্ন পুড়নে জাকসু কার্যকরের বিকল্প নেই।
তিনি আরো বলেন, যেসব সংস্কারের কথা আসতেছে সেগুলো এই রোডম্যাপের মধ্যেই সংস্কারের সুযোগ রয়েছে। সংস্কারের নামে নির্বাচন পেছানোর পায়তারা মেনে নেওয়া হবে না। প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে ১ ফেব্রুয়ারিতেই তফসিল ঘোষণা সম্ভব।
জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, আমরা বিগত সময়ে দেখেছি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ও প্রশাসনের গোপনচুক্তির মধ্যের ছাত্রসংসদগুলো বন্ধ ছিল। তারা এখনো চায় না ছাত্রসংসদ কার্যকর হোক। আমরা চাই, দীর্ঘ প্রায় ৩২ বছরের বিরাজনীতিকরণের এই প্রক্রিয়া বন্ধ হোক।
জাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক নাইমুল হাসান কৌশিক বলেন, ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিবাদী শিক্ষকদের বিচারের আগে জাকসু নির্বাচন চাই না। আমরা অনেকদিন ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম সেজন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সময়ের প্রয়োজন।
ছাত্রফ্রন্টের সোহাগি সামিয়া বলেন, কোন সংগঠনকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নির্বাচন পেছানো যায় না। এতো বড় আন্দোলনের পরেও যদি আমরা ছাত্রসংসদ কার্যকর করতে না পারি তাহলে পুরো দেশের গণতন্ত্র সেখানেই ভেঙে পরে।
সরকার ও রাজনীতি ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, প্রশাসনের অনেকের অনিচ্ছা ও অসহযোগিতার কারণে ছাত্রসংসদ এখনো কার্যকর হয়নি। জাকসু কার্যকর হলে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন হবে, এতে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের অপকর্মের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য তারা জাকসু চান না। জাকসুর বিষয়ে প্রশাসন একেবারেই বৈরী। বিভিন্ন যায়গা থেকে জাকসুর গঠনতন্ত্রের সংস্কার চাওয়া হচ্ছে। অথচ, জাকসুর সংস্কারের জন্যও ছাত্রসংসদ প্রয়োজন বলে আইনে উল্লেখ আছে।
এ বিষয়ে গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, বিভাগের ছাত্রসংসদগুলো কার্যকর রাখার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদগুলো নির্বাচনের ধারাবাহিকতাও বজায় রাখতে হবে। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের মাধ্যমে ছাত্রসংগঠনগুলোকে একটি বিধির মধ্যে আনতে হবে।
ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার সংগঠক ইয়াছিন আরাফাত (রাজু) বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা বলে, দাবি-দাওয়া উপস্থাপনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছিল ছাত্র সংসদ কার্যকর করা। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে গঠিত হওয়া বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাকসু রোডম্যাপ প্রদানের বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এবং আমরা মনে করি এটি বাস্তবায়নে জাবি প্রশাসনকে আরো সতর্ক পদক্ষেপে দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
জাবি শিবির সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া, প্রত্যাশা ও স্বার্থের প্রতি সর্বদাই সম্মান-সংহতি জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী অবিলম্বে ছাত্রসংসদ কার্যকর করার মাধ্যমে জুলাইয়ের চেতনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন সময়ের দাবি। আমরা চাই পেশি শক্তির পরিবর্তে বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির চর্চা হোক।
জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহবায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, ছাত্ররাজনীতির ছাত্রলীগ মডেল থেকে দূরে সরে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বা কল্যাণকে প্রাধান্য দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অতি জরুরি।