উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা: প্রস্তুতি শুরু করবেন যখন

সুবর্ণা মেহজাবীন স্বর্ণা
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৮

বিদেশে উচ্চশিক্ষা। ছবি: সংগৃহীত
বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন শুধু একটি ডিগ্রি পাওয়া নয়, একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মধ্যে নিজেকে বিকশিত করার অভিজ্ঞতা লাখো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। তবে এই স্বপ্ন পূরণ সহজ নয়; প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, সময়মতো প্রস্তুতি ও দৃঢ় মানসিকতা।
ইংরেজি দক্ষতা অর্জন থেকে শুরু করে বৃত্তির সন্ধান, ভিসা আবেদন থেকে নতুন দেশে অভিযোজন- প্রতিটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং। আর এই পথচলার সফলতা নির্ভর করে কতটা আগে এবং কিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে তার ওপর।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি যত আগে শুরু করা যায়, তত ভালো। সাধারণত অষ্টম বা নবম শ্রেণি থেকেই একটি সাধারণ ধারণা তৈরি করা ভালো। এই সময় থেকেই ভাষার দক্ষতা (ইংরেজি) এবং একাডেমিক গ্রেডের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। উচ্চ মাধ্যমিক বা কলেজ লেভেলে পৌঁছে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি এবং বৃত্তি খোঁজা শুরু করা উচিত। যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিদেশে পড়তে চান, তাদের অন্তত দু-এক বছর আগে থেকে পরিকল্পনা শুরু করা দরকার।
সঠিক দেশ ও বিষয় নির্বাচন
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথমে দেশ ও বিষয় নির্ধারণ করতে হবে। কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় কোন বিষয়ের জন্য সেরা, তা গবেষণা করুন। উদাহরণস্বরূপ, প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জার্মানি এগিয়ে; ব্যবসা শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর ভালো। বিষয় নির্বাচনের সময় অবশ্যই নিজের আগ্রহ এবং ভবিষ্যৎ চাকরির বাজারের কথা মাথায় রাখতে হবে।
ক্যারিয়ার লক্ষ্য ঠিক করা, উচ্চশিক্ষার পর পরিকল্পনা
বিদেশে উচ্চশিক্ষার আগে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে- যে বিষয়ে ডিগ্রি নিতে আগ্রহী সেই ডিগ্রি নিয়ে ভবিষ্যতে কী করতে চাই; উচ্চশিক্ষার পর দেশে ফিরে কাজ করবে, নাকি প্রবাসে থাকবে; এই ডিগ্রি ভবিষ্যৎ চাকরির জন্য কতটা কার্যকর হবে, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। ক্যারিয়ার পরিকল্পনা সুস্পষ্ট হলে আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং এসওপি লেখার সময় নিজের লক্ষ্য ভালোভাবে তুলে ধরা যায়।
ভাষার দক্ষতা
ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বাধ্যতামূলক। স্কুল পর্যায় থেকেই ইংরেজি ব্যাকরণ, পড়া ও লেখায় ভালো হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। উচ্চ মাধ্যমিক বা স্নাতক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ইংরেজি ভাষা পরীক্ষণ ব্যবস্থা বা টোফেলের প্রস্তুতি শুরু করুন। সাধারণত ৬.৫+ (IELTS) বা ৮০+ (TOFEL) স্কোর ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রয়োজন। প্রস্তুতির জন্য অনলাইনে বিনামূল্যে রিসার্চ, মক টেস্ট ও কোচিং সেন্টারের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
একাডেমিক রেজাল্ট
ভালো একাডেমিক ফল বৃত্তি পাওয়া এবং ভর্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল ও কলেজ পর্যায় থেকে ভালো ফলাফলের দিকে নজর দিন। সিজিপিএ, জিপিএ বা গ্রেডিং সিস্টেমের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন দেশের ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারিত হয়। গবেষণামূলক প্রোগ্রামে আগ্রহী হলে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ভালো ফল এবং এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসও গুরুত্বপূর্ণ।
বৃত্তি ও ফান্ডিং খোঁজা
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থনৈতিক প্রস্তুতি দরকার। উচ্চ মাধ্যমিক বা স্নাতক পর্যায়েই বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রাম সম্পর্কে জানুন। চেভেনিং, ফুলব্রাইট, কমনওয়েলথ স্কলারশিপের মতো প্রগ্রামের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া আগে থেকেই শুরু করুন। আবেদনপত্রে শক্তিশালী SOP (statement of purpose) এবং LOR (Letter of Recommendation) দরকার হয়, তাই এগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে।
মানসিক ও সাংস্কৃতিক অভিযোজন
নতুন দেশের ভাষা, সংস্কৃতি এবং পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পরিবার ও সামাজিক সমর্থনের ভূমিকা অনেক।
সফলতা ও ব্যর্থতার সম্ভাবনা
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে গেলে সব সময় সাফল্য আসবে, এমন নয়। অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়ায় বাধার সম্মুখীন হয়, ভিসা বাতিল হয় বা বৃত্তি না পাওয়ার হতাশা আসে। এসব ক্ষেত্রে ব্যাকআপ পরিকল্পনা রাখা জরুরি। যদি কোনো একটি আবেদন ব্যর্থ হয়, তাহলে বিকল্প দেশের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।