ইউরোপে উচ্চশিক্ষার জন্য আদর্শ শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি হলো ইংল্যান্ড। দেশটিতে বিশ্ববিখ্যাত সব বিদ্যাপীঠের অবস্থান হওয়ায় বহু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে দেশটিতে পড়াশোনা করার। আজ ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের পদ্ধতি, পড়াশোনার খরচ, স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন সুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক।

ইংল্যান্ড সেরা গন্তব্য কেন

যেকোনো র‌্যাঙ্কিংয়ে দীর্ঘ সময় ধরে শীর্ষ ১০-এ থাকে দেশটির অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন প্রায়ই শীর্ষে থাকে। তা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য সেরা শহর বিবেচনায় গত বছরের শীর্ষ স্থানটি দখল করে ছিল লন্ডন। ইংল্যান্ডের জীবনধারণের মানও উন্নত। বিশেষ করে আকর্ষণীয় স্কলারশিপগুলো অর্জনের মাধ্যমে পড়াশোনার পাশাপাশি সেই জীবনধারণের সান্নিধ্যে যেতে পারেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা।

আবেদনের পূর্বশর্ত

আবেদনের অন্যতম শর্ত হলো আইইএলটিএস পরীক্ষায় ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ স্কোর। আন্ডারগ্রেড প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তির জন্য ১৩ বছরের একাডেমিক শিক্ষাবর্ষ অতিবাহিত করতে হবে। এখানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের যোগ্যতা যুক্তরাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক বা ন্যাশনাল ডিপ্লোমায় পরিচালিত ‘এ’ স্তরের পরীক্ষার সমতুল্য হওয়া আবশ্যক। আর স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে আবেদনের প্রথম শর্ত হলো স্নাতক পাস করা। শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য উচ্চ মাধ্যমিকে প্রাপ্ত জিপিএ ৮০ ও ৯৫ শতাংশের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। সেখানে ফলাফল ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ হলে আবেদন করা যাবে মাঝারি স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেগুলো সর্বশেষ অর্জিত ডিগ্রির মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন (এমওআই) ইংরেজি দেখেই আবেদন গ্রহণ করে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভর্তির অন্যতম প্রধান যোগ্যতা থাকে ভালো আইইএলটিএস স্কোর। উপরন্তু স্কলারশিপ দেওয়ায় একাডেমিক যোগ্যতার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার দক্ষতাকে মূল্যায়ন করা হয়। স্নাতক অধ্যয়নের জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ থাকতে হয়। প্রি-মাস্টার প্রোগ্রামের জন্য প্রয়োজন হবে ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ স্কোর। সরাসরি স্নাতকোত্তরে আবেদন করতে লাগবে ৬ থেকে ৭ ব্যান্ড স্কোর। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করে তা ভিন্ন হতে পারে। এমবিএতে আবেদনের যোগ্যতায় অতিরিক্ত দেখাতে হবে দুই থেকে তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা। এ ক্ষেত্রে আইইএলটিএস ফলাফল ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭-এর মধ্যে থাকা জরুরি। আইইএলটিএস ব্যান্ড স্কোরের এ শর্তটি পিএইচডির জন্যও প্রযোজ্য। তবে অবশ্যই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। স্নাতকোত্তরের কোনো কোনো কোর্সে আরো কিছু প্রবেশিকা পরীক্ষার স্কোরের প্রয়োজন হয়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন হচ্ছে জিআরই ও জিম্যাট। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ, ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ, ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার, কিংস কলেজ লন্ডন, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল, ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক প্রভৃতি।

আবেদনের সময়

সাধারণত সামার, অটাম ও স্প্রিং তিনটি সময়ে ইংল্যান্ডের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তির কার্যক্রম শুরু করে। সেখানে সামার মে থেকে জুন পর্যন্ত। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর অবধি থাকে অটাম এবং জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে চলে স্প্রিং অ্যাডমিশন। তবে ভর্তির মৌসুম নির্বিশেষ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার ন্যূনতম ৯ থেকে ১০ মাস আগে আবেদন শুরু করা উচিত।

ইংল্যান্ডে পড়াশোনার সম্ভাব্য খরচ

সাধারণত হিউম্যানিটিস, আর্টস ও জেনারেল এডুকেশন কোর্সগুলো বেশ স্বল্প খরচে হয়। অন্যদিকে মেডিসিন ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিষয়গুলো যথেষ্ট ব্যয়বহুল। স্নাতক অপেক্ষা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অধ্যয়ন ফি সাধারণত বেশি হয়ে থাকে, যা বিষয়ভেদে ভিন্ন হয়। অন্যান্য দেশের মতোই এমবিএ প্রোগ্রামগুলোর খরচ সর্বাধিক। স্নাতক ডিগ্রির বার্ষিক খরচ ১০ থেকে ২০ হাজার পাউন্ড এবং স্নাতকোত্তরে গড়পড়তায় খরচ হয় প্রতি বছর ১২ থেকে ২২ হাজার পাউন্ড। বার্ষিক ১৫ থেকে ২৪ হাজার পাউন্ড বাজেট রাখতে হবে ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পিএইচডি প্রোগ্রামগুলোর জন্য সম্পূর্ণ অর্থায়নের ব্যবস্থা থাকে।

জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে লন্ডনের বাইরে থাকা হলে বাজেট অনেকটাই সাশ্রয়ী হয়ে আসে। শেয়ার করা রুমে গড়ে আবাসন খরচ হতে পারে মাসিক ৫৫৪ পাউন্ড। মাসে সম্ভাব্য ইউটিলিটি বিল ৪০ থেকে ৫০ পাউন্ড। খাদ্য ও গৃহস্থালির জন্য রাখতে হবে ১৬০ থেকে ২০০ পাউন্ড। মুঠোফোন বিল ১৫ থেকে ৫০ পাউন্ড। স্টুডেন্ট পাস নিয়ে যাতায়াত করা হলে পরিবহনে ব্যয় হবে প্রায় ৩২ পাউন্ডের (পাঁচ হাজার ১৪ টাকা) মতো।