Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

আন্দোলনে হামলা: বহিষ্কার ১২৮ জনের নাম প্রকাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষোভ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৭:০৭

আন্দোলনে হামলা: বহিষ্কার ১২৮ জনের নাম প্রকাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষোভ

আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বহিষ্কৃতদের তালিকা অপূর্ণাঙ্গ দাবি করে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলন চলার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত ১২৮ শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশ পাওয়ার পর বিক্ষোভ হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, হামলার ভিডিও ও স্থিরচিত্রে দেখা যাওয়া ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীর নাম এই তালিকায় নেই, অন্যদিকে ‘নিরীহ’ অনেক শিক্ষার্থীর নাম আছে এতে।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়। বিক্ষোভকারীরা মিছিল শেষে বিকাল ৪টার উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকে।

বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিরা এই প্রতিবেদন লেখার সময় প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ ও আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা তদন্তে কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হকের সঙ্গেও কথা বলছিলেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন সরকার পতন আন্দোলনে রূপ নেওয়ার সময়ক্রম গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত হামলার বিষয়ে গঠিত তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সোমবার ১২৮ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায়।

সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবে মঙ্গলবার তালিকাটি সামনে আসে।

বরখাস্ত প্রায় সবাই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ও অন্তর্বর্তী সরকারের আদেশে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এদের মধ্যে আছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি আসিফ ইনান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন।

তবে তালিকায় নাম নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুসের নাম।

যে ১২৮ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের মধ্যে দুই জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই না বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

যারা শিক্ষার্থীই না, তাদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে বহিষ্কার করেছে- এই প্রশ্নে তদন্ত কমিটি আহ্বায়ক মাহফুজুল ইসলামের মন্তব্য জানতে পারেনি সাম্প্রতিকশাম্প্রতি একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

যা হয়েছিল

গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধিতা করে শুরু হওয়া আন্দোলনে ১৫ দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ সদস্যরা।

সেদিন থেকে সহিংসতা পরে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি কলেজে ছড়িয়ে পড়ে, ছাত্রদের আন্দোলনে যুক্ত হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ।

ব্যাপক সহিংসতার মধ্য দিয়ে আসে সরকার পতনের ডাক। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে উড়ে যান, তিন দিন পর গঠন হয় অন্তর্বর্তী সরকার।

সরকার পতনের পর ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতার ঘটনা অনুসন্ধানে ওই কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর প্রায় পাঁচ মাস পর গত বৃহস্পতিবার কমিটির প্রধান আইন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল হক সুপণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের হাতে প্রতিবেদন তুলে দেন। এর চার দিনের মাথায় আসে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত।

ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ

সাময়িক বরখাস্তদের নাম প্রকাশের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ফেসবুক পেজে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের ক্ষোভ জানাতে থাকেন। এবি জুবায়ের নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, “তানভীর হাসান সৈকত, ইউনুসসহ স্পষ্ট ফুটেজ থাকা অনেকের নামই তালিকায় নেই। কাদের ইশারায় এদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনকে তা স্পষ্ট জানাতে হবে। অপূর্ণাঙ্গ এই তালিকা আমরা মানি না।”

বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এই তালিকা অপূর্ণাঙ্গ দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশিদ ফেসবুকে লিখেন, “১২৮ জনের লিস্ট কারা তৈরি করছে এইটা আমরা জানতে চাই। জসিমউদদীন হলের মাঠে ফেলে আমাকে আর হামজা ভাইকে পিটিয়ে মাথা ফাটানো মেহেদী হাসান শান্তের নাম নাই, আমার বোনেদের যারা ভিসি চত্বরে পেটালো, তাদের নাম আসে নাই।” বহিষ্কৃতদের তালিকায় নারী শিক্ষার্থীদের নাম না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি আরও লিখেন, “একটা সিঙ্গেল নারীকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বহিষ্কার করে নাই, অথচ নির্যাতনের মাত্রা হিসেব করলে এরা পুরুষ ছাত্রলীগের থেকেও ভয়ংকর ছিল।”

নারী ছাত্রলীগার ‘সন্ত্রাসীদের‘ কারা শেল্টার দিচ্ছে?”, প্রশ্ন রাখেন রিফাত।

স্মৃতি আফরোজ সুমি নামে আরেক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন বহিষ্কৃতদের তালিকা করতে তদন্তের দায়িত্ব কোনো আওয়ামী লীগ সমর্থককে দেওয়া হ‌য়েছিল কি না। “লিস্ট দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। না হলে স্পষ্ট ফুটেজ, প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও প্রতি হল থেকে ১০/১৫ জনের নাম বাদ পড়ে কীভাবে?“

সুমাইয়া ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন, “১৫ জুলাই ছাত্রলীগের সবচেয়ে অমানবিক কাজ ছিল ঢাকা মেডিকেলে হামলা। সেই হামলায় বেশিরভাগ হামলাকারী ছিল জগন্নাথ হলের। অথচ জগন্নাথ হল থেকে মাত্র ২ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

হামলাকারী হিসেবে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী‘ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাদ পরে গেল!”


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫