কুয়েটের ভিসি-প্রোভিসিকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত, অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০১

কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস কে শরিফুল আলম। ছবি সংগৃহীত
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য (প্রোভিসি) অধ্যাপক ড. এস কে শরিফুল আলমকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ও ক্যাম্পাসে অস্থির পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বুধবার দিবাগত রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কুয়েটে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কারণে উদ্ভূত সংকট নিরসন ও শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত পুনরায় চালু করতে উপাচার্য ও প্রোভিসিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠন করে নতুন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে ভিসির দায়িত্ব দেওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পর বুধবার রাত একটার দিকে অনশন ভাঙেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য (ইউজিসি) অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান জুস পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। তার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বার্তাটি শিক্ষার্থীদের পড়ে শোনান তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই বার্তা পাওয়ার পর ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার অঞ্চলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। সেখান থেকে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। এ খবরে আনন্দ মিছিল করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও।
ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে ‘লাল কার্ড’ দেখান শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।
২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থার মধ্যে ১৪ এপ্রিল রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বন্ধ থাকা শিক্ষা কার্যক্রম ৪ মে ও আবাসিক হলগুলো ২ মে খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়।
সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন ১৫ এপ্রিল দুপুরে একের পর এক হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। সেইসঙ্গে, উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
গত ২১ এপ্রিল বিকেলে স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনশন শুরু করেন কুয়েটের ৩২ শিক্ষার্থী। এর তিন দিনের মাথায় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন।