
ফাইল ছবি
এবার বছরের প্রথম দিন ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ ঘিরে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বইয়ের মুদ্রণ কাজ স্থগিত থাকায় নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যপুস্তক পাওয়া নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবারের বই উৎসব।
গত বছর এ সময়ে বেশিরভাগ জেলায় বই সরবরাহ হলেও এবার এখনো শুরুই হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কারণ এবার প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ৩৭ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কম দর দিয়ে কাজ পেতে যাচ্ছেন মুদ্রাকররা। ফলে সরকারের টাকা সাশ্রয় হলেও ‘অস্বাভাবিক’ এই কম দর দিয়ে মানসম্মত বই শিক্ষার্থীরা পাবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
জানা যায়, গত বছরও এই সময়ে প্রাথমিকের প্রায় ৯০ শতাংশ বই সরবরাহ করা হয়েছিল; কিন্তু এ বছর শতাংশে উল্লেখ করার মতো কোনো বই সরবরাহ করা হয়নি। বরং কম দরের মানহীন বই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে এনসিটিবি।
মুদ্রণকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতিও কম দরে মানসম্মত বই দেয়া সম্ভব নয় বলে সংশয় প্রকাশ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে চিঠি দিয়েছিল। এরপরও বিষয়টি সুরাহা করা হয়নি। ফলে এখন কম দামের বই ও ছাপানোর কাজ বিলম্ব হওয়ায় নতুন বছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও সব শিক্ষার্থীর হাতে বই দিতে পারবে না সরকার।
- মানহীন বই নিয়ে সংশয়ে এনসিটিবি
- নতুন বছরের শুরুতে বই পাবে না সবাই
তিনি আরো বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় শিগগির বই পাঠানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘নানা কারণে এবার যথাসময়ে বই পাঠাতে পারিনি। এছাড়া অন্যান্য বছরের চেয়ে কম টাকা দরে বই ছাপানো হচ্ছে। এবার যখন দরপত্র আহ্বান করা হয়, তখন বাজারে কাগজের দাম অনেক বেশি ছিল; কিন্তু দরপত্র জমা দেয়ার সময় কাগজের দাম অনেক কমে যায়। এছাড়া করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে কোনো কাজ নেই। ফলে তীব্র প্রতিযোগিতায় অনেকে কম দামে দরপত্র জমা দিয়েছে। তবে তারা নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী মান নিশ্চিত হয়ে বই গ্রহণ করবেন।’
এ বিষয়ে এক মুদ্রাকর জানান, পাঠ্যাংশ মুদ্রণের পরপরই বাঁধাই না করলে কাগজ নষ্ট হয়ে যায় বলে তারা আগে কাভার ছাপেন। পরে পাঠ্যাংশ ছাপিয়েই বাঁধাই করা হয়; কিন্তু এবার কাভার ছাপতে না পারায় বই ছাপাই আটকে যায়। এ বছর প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩৪ কোটি বই বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি প্রাথমিক স্তরের। বাকিগুলো মাধ্যমিক, দাখিল ও ইবতেদায়ি স্তরের বই। অন্যান্য বছর অক্টোবরে ৩৫ কোটি বইয়ের অন্তত ৬০-৭০ শতাংশ মাঠপর্যায়ে পাঠানোর কাজ শেষ হয়ে থাকে; কিন্তু এ বছর অক্টোবর মাসের তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও একটি বইও পাঠানো হয়নি। দরপত্রের শর্তানুযায়ী, প্রাথমিকের বই ছাপতে মুদ্রাকররা ৯৮ দিন আর মাধ্যমিকের জন্য ৬০ দিন পেয়ে থাকেন; কিন্তু এবার বইয়ের চুক্তি গত ৮ অক্টোবর শেষ হয়েছে। সেই হিসাবে, মধ্য-জানুয়ারি পর্যন্ত মুদ্রাকররা বই ছাপার সময় পাবেন। এ সময়ের আগে বই না দিলে জরিমানারও সুযোগ নেই বলে জানা গেছে।
এদিকে বইয়ের মুদ্রণ কাজ শুরুতে বিলম্ব ও বন্ধ করে রাখার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এবার কাগজের দাম অবিশ্বাস্যভাবে কমে গিয়েছিল। গত বছর খোদ এনসিটিবিই যে কাগজ প্রতি টন ৯০ হাজার টাকার ওপরে কিনেছে, এবার তারা সেটি কেনে ৬৫ হাজার টাকা করে। আর খোলা বাজারে এই কাগজের দাম ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেমেছিল; কিন্তু কাগজের মিলগুলো সংঘবদ্ধ হয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুদ্রাকররা। এ কারণে কাগজ কেনায় হঠাৎ হোঁচট খেয়েছেন মুদ্রাকররা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘বইয়ের মুদ্রণ কাজ কতটা এগিয়েছে, তা আমাদের বলবে এনসিটিবি। পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান যদি এ ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা করে, তাহলে তারাও দরপত্রের শর্তানুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি হবে।’
প্রাথমিকে এবারো আন্তর্জাতিক দরপত্রে কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল; কিন্তু এবার সর্বনিম্ন দরদাতা সবাই দেশীয় মুদ্রণকারী। এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘কম দর হওয়ায় মানসম্মত বই নিয়ে তারাও যে সংশয়ে নেই, তা নয়। তবে তারা চেষ্টা করবেন মানসম্মত বই আদায়ের জন্য।’