Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোন পথে

Icon

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:০৯

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোন পথে

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৯টিতে তিন গুচ্ছে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সম্মান প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। 

নতুন শিক্ষাবর্ষ নিয়ে ইতিমধ্যে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সদ্য অটোপাস পাওয়া শিক্ষার্থীরাও। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন সংকট ও সেশনজট আতঙ্কে ভুগছেন তারা। যত দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরীক্ষা নিয়ে সেশনজট কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরাও। 

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তিনটি, সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ধারার ২০টি ও কৃষিসহ মোট ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয় এবার গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে অংশ নিচ্ছে। বাকিগুলো নিজ নিজ প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে। তবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাচ্ছে না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ইউজিসি সূত্রে আরো জানা যায়, ডিপ্লোমা কোর্স থাকায় গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাওয়ার সুযোগ নেই ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট)। আর বিশেষায়িত তিনটি- বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি বুয়েটের সাথে গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেতে চাইলেও বুয়েট সম্মতি দেয়নি। এসব বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নেবে।

ইউজিসি আরো জানায়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পরীক্ষা হবে সেগুলোতে প্রাথমিক আবেদনের জন্য শিক্ষার্থীদের কোনো ফি দিতে হবে না। যেসব শিক্ষার্থীর ন্যূনতম যোগ্যতা থাকবে, তারা সবাই প্রাথমিকভাবে আবেদন করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে বাছাই করা শিক্ষার্থীরা ৫০০ টাকা ফি জমা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদন করবেন।

সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে জিপিএ-৫-এর কোনো মূল্য নেই এখন। আমরা পরীক্ষা দিয়েই ভালো ফলাফল করতে চেয়েছিলাম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাছাই প্রক্রিয়াটি কীভাবে হবে, তা বুঝতে পারছি না। আমরা অনেকেই হয়তো প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদও পড়ে যেতে পারি। যা-ই হোক, অপেক্ষায় আছি কবে আবার নতুন শিক্ষা অধ্যায়ে প্রবেশ করতে পারব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে মঞ্জুরি কমিশন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আছে। এখন দেরি না করে ভর্তি পরীক্ষা যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে ফেলা উচিত। তা না হলে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ ভয়াবহ সেশনজটে পড়বে। এমনিতে আসন সংকটে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আমার মনে হয়, শিক্ষার্থীরাও এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।’ 

প্রাথমিক আবেদনের পর বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে করে শিক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। পরীক্ষা হবে ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর বাইরেও অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা খাত করোনাভাইরাসের কারণে একটি সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ইউজিসি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যুগোপযোগী। যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে তখন আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরীক্ষাগুলো নেব।’ 

তবে তিনি আসন সংকটের পাশাপাশি সেশনজট নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু থেকেই সেশনজট ছিল না; কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এখন শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ার একটি আশঙ্কা রয়েছে। সরকার যত তাড়াতাড়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে, তত তাড়াতাড়ি এই সংকট থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মিলবে। প্রতিষ্ঠান খোলার পর আমরা চেষ্টা করব যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার্থীদের এ থেকে রিকভারি দেয়া যায়।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অটোপাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের এমনিতেই একটি প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে সরকার। ইউজিসি যতটুকু পদক্ষেপ নিয়েছে, এখানে অসচ্ছতা রয়েছে। কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে, তা পরিষ্কার নয়। সবকিছুই যখন স্বাভাবিক নিয়মে চলছে, তখন ভর্তি পরীক্ষাও আর বিলম্ব না করে নিয়ে ফেলা উচিত।’

এদিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মানবিক শাখায় এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া মেহেরুন্নেসা জেবুন জানান, পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে তিনি শঙ্কায় রয়েছেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই বেশ লম্বা একটি সেশনজটে পড়ার শঙ্কাও রয়েছে। 

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের দোহাই দিয়ে পুরো শিক্ষা খাতকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে। আমার অনুরোধ থাকল- সবকিছুই যখন খুলে দেয়া হচ্ছে, আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়েও যেন আর কালবিলম্ব না করা হয়।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫