বেসরকারি শিক্ষকদের উৎসব ভাতা শতভাগে উন্নীত করা আবশ্যক

মো. রহমত উল্লাহ
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২১, ১৬:১১

সরকারি এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের বর্তমানে জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় আনা হয়েছে। শতভাগ বেতন দেয়া, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী তথা বাংলা নববর্ষ ভাতা, অনেক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এমপিও ভুক্ত করা হচ্ছে। এতে অবশ্যই তারা আগের তুলনায় কিছুটা ভালো আছেন এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উৎসব ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারা দীর্ঘদিন বঞ্চিত আছেন এটিও অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
গত ২২ জানুয়ারি ২০০৪ তারিখে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তৎকালীন বিএনপি সরকার এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা দেয়া শুরু করে। দীর্ঘ ১৭ বৎসরেও এই উৎসব ভাতার পরিমাণ আর বৃদ্ধি করা হয়নি। শিক্ষকগণ অত্যন্ত যৌক্তিকভাবেই এই উৎসব ভাতা শতভাগ প্রদানের দাবি করে আসছেন বারবার। সর্বশেষ সবার ধারণা ছিলো এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর মাধ্যমে ঘোষণা করা হবে শতভাগ উৎসব ভাতা। কিন্তু তা হয়নি! সরকারি শিক্ষকগণ শতভাগ উৎসব ভাতা পাবেন অথচ একই দায়িত্ব পালনকারী বেসরকারি শিক্ষকগণ পাবেন সিকিভাগ, এটি কোনো যুক্তিতেই মেনে নেয়া যায় না।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সেচ্ছায় এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদানের ব্যবস্থা করতে পেরেছে, বৈশাখী ভাতা প্রদান করার ব্যবস্থা করতে পেরেছে, অনেক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিও ভুক্ত করতে পেরেছে; অথচ শিক্ষকদের ২৫ ভাগ ও কর্মচারীদের ৫০ ভাগ উৎসব ভাতাকে শতভাগে উন্নীত করতে পারছে না, করছে না, কোন যুক্তিতে? এতকিছু দেয়ার পরেও সামান্য উৎসব ভাতার জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের মন খারাপ করে থাকতে হবে কেন? প্রতি বৎসর উৎসব এলেই সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠতে হবে কেন? এর পিছনে কিন্তুটা কি?
অতিমারি কভিডের কারণে গত এক বছরেরও অধিক সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষকগণ অত্যন্ত কষ্টের জীবন যাপন করছেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে গত ২০২০ সালের টিউশন ফি নেয়া যায়নি এবং ২০২১ সালের সেশন চার্জ নেয়া যায়নি, টিউশন ফিও নেয়া যাচ্ছে না। সকল অভিভাবক বেতন-ফি দিতে অক্ষম তা কিন্তু নয়। ক্লাস না হওয়ার কারণে যারা সক্ষম তারাও বেতন-ফি দিতে চাচ্ছেন না, দিচ্ছেন না। শহরকেন্দ্রিক কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস চলমান থাকলেও এই ক্লাসকে অধিকাংশ অভিভাবক ক্লাস মনে করছেন না। শিক্ষার্থীরাও এখন আর অনলাইন ক্লাস করতে চাচ্ছে না। এমনকি এসাইনমেন্ট করতেও অনীহা দেখাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী। বেতন চাইতে গেলে শিক্ষকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন অনেক অভিভাবক। হাতে গোনা দুই/একটি নামিদামী ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সারাদেশের চিত্র এমন অথবা এর চেয়েও খারাপ।
বর্তমান বাজারে শুধুমাত্র এমপিওর সামান্য টাকা দিয়ে একজন শিক্ষকের সংসার চালানো কোনভাবেই সম্ভব নয়। অথচ গত এক বছর যাবত শিক্ষকগণ প্রতিষ্ঠান থেকে তেমন কিছুই পাচ্ছেন না। বোনাস পাওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। যারা সরকারি নিয়ম মেনে প্রাইভেট টিউশনি করতেন তারাও টিউশনি করতে পারছেন না। এমতাবস্থায় আসন্ন ঈদে যদি শিক্ষকদের শতভাগ বোনাস দেয়া না হয় তাহলে- ঈদ অর্থ আনন্দ সেটি আর তাদের কাছে সত্য থাকবে না।
সরকার ও মন্ত্রণালয়ের সকল আদেশ-নির্দেশ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নকারী প্রায় ৯৮ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এমতাবস্থায় প্রকৃতপক্ষে সহানুভূতিশীল হয়ে সময়মত যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আসন্ন ঈদে শতভাগ উৎসব বোনাস পাওয়া যাবে বলে শিক্ষকরা বিশ্বাস করেন। কেন না, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।
মো. রহমত উল্লাহ: কলাম লেখক, সাহিত্যিক এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।