Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

শিক্ষাখাতে বাজেট: শিক্ষকদের বেতনভাতা-এমপিওভুক্তির আদ্যোপান্ত

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২১, ১৬:০৭

শিক্ষাখাতে বাজেট: শিক্ষকদের বেতনভাতা-এমপিওভুক্তির আদ্যোপান্ত

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর থেকেই শিক্ষকদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর থেকেই শিক্ষকদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। শিক্ষাখাতে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দেখা দিয়েছে। কারণ, বাজেটের আগে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ঈদ বোনাস, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার দাবি করেছিলেন। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের দাবিও উপেক্ষিত হয়েছে। শিক্ষকরা বাজেট নিয়ে খুশি হতে পারেননি।

এদিকে, সবচেয়ে বেশি ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে বাজেটে এমপিওভুক্তির বরাদ্দ নিয়ে। কারণ, ‘এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ থাকছে’- বাজেট ঘোষণার আগে এমন খবর ছিল শিক্ষকদের কাছে। আর এমপিওভুক্ত করার বরাদ্দ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ নিয়ে কোনো কথা  না বলায় এতে হতাশ হয়েছেন শিক্ষকরা।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সংক্ষিপ্তসারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয় উল্লেখ নেই। শুক্রবার (৪ জুন) বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীকে লিখিত প্রশ্ন করা হলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। আসুন জেনে নেয়া যাক ২০২১-২২ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বাজেটের বিভিন্ন খাত। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এ নিয়ে বরাদ্দ আছে।

এমপিওভুক্তিতে বরাদ্দ
আসন্ন ২০২১-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুযোগ রেখে বরাদ্দ চেয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বরাদ্দ চাওয়ার বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয় সেই বরাদ্দ সিলিং করে দিয়েছিল আগেই। সেই বরাদ্দ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা এমপিওভুক্তির জন্য ব্যয় করতে পারবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট উইং থেকে জানা গেছে, ‘নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য প্রথমে ২০০ কোটি টাকা সিলিং করে দেওয়া হয়েছিল। পরে আবার তা বাড়ানো হয়। এ ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে এমপিওভুক্তির খাতে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ দেশের ৬০০ থেকে ৮০০ নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাস্তর এমপিওভুক্তির টার্গেট নিয়ে বরাদ্দ চেয়েছিল এবার।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চাই। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য সুযোগ রেখে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া রিভাইজ বাজেটেও বরাদ্দ চাইবো।’

বরাদ্দ বাড়ল ৫ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা
আগামী অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৫ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরে দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৭১ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। দুই মন্ত্রণালয় মিলে ৫ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় শতাংশের হিসাবে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে দশমিক ৫ শতাংশ।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) ছিল ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।

কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষার জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) এ মন্ত্রণালয় জন্য বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা।

বাজেট নিয়ে অখুশি শিক্ষকরা
জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর পর ২০১৯ সালে দুই হাজার ৫৮৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। তখন এমপিওভুক্তির জন্য ৯ হাজার ৪৯৫টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। এরমধ্যে দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা করা হয়। পরে যাচাই-বাছাই করে ১৪১টি প্রতিষ্ঠান বাতিল করা হয়।

পরবর্তী দুই বছরে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে সারা দেশে সাত হাজারের বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পৌনে দুই লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন।

নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি সংশোধিত এমপিও নীতিমালা জারি করেছে। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে এমওপিও খাতে বরাদ্দ রাখা হবে। কিন্তু সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন বাজেট বক্তৃতায় ঘটেনি।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষা খাত নিয়ে কোনো চমক ছিল না। তিনি বিগত বছরের কার্যক্রমই তুলে ধরেছেন। যদি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হতো তাহলে বাজেট বক্তৃতায় তা অবশ্যই উল্লেখ করতেন অর্থমন্ত্রী। কারণ, বাজেটে শিক্ষা খাতের প্রধান চমকই হলো এমপিওভুক্তি। সারা দেশের শিক্ষকরা এই ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করেন। 

তবে যেহেতু চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে চার হাজার ১৭৭ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষা খাতে, সেহেতু সরকার ইচ্ছা করলে এ বরাদ্দ থেকে বা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ থেকে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারে।

বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, বাজেটে এমপিওভুক্তির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলেও তারা কিছু বলতে পারেননি। আমাদের দুয়েকদিন অপেক্ষা করতে বলেছেন। বাজেটে এমপিওখাতে বরাদ্দ রাখা না হলে আন্দোলন ছাড়া উপায় থাকবে না।

তিনি আরো বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা সবচেয়ে বেশি আর্থিক সংকটে পড়েছেন। সরকার সামান্য অনুদান দিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষক অনুদান তুলতে পারেননি। এমপিওভুক্তি না করলে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।

নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইলে বার্তা পাঠালেও জবাব দেননি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আগামী অর্থবছরে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ আছে কি না তা বিস্তারিত বাজেট দেখে জানা যাবে। দুয়েকদিনের মধ্যে আমরা এ ব্যাপারে জানতে পারব।

সামগ্রিক বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে- করোনার এ মহামারিতে যেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে েশিক্ষাখাত এবং তার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকরা। কিন্তু শিক্ষাখাতের এ ক্ষতি পোষাতে স্পষ্টভাবে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই। তার সঙ্গে দেশের লাখ লাখ শিক্ষক যে মানবেতর জীবন যাপন করছে তা থেকে উত্তরণের জন্যও নির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা নেই। এদিকে,  এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মুজিববর্ষে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ঈদ বোনাস, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার জন্য বাজেটে দাবি তুলেছেন। শিক্ষকরা চান না তারা আর উপেক্ষিত হউক।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫