Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

শিক্ষকদের খবর রাখে কে?

Icon

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২১, ০৭:৪৩

শিক্ষকদের খবর রাখে কে?

করোনা সংক্রমণ বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বন্ধ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

স্কুলের ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের জীবন গড়তে যে শিক্ষকদের ব্যস্ত সময় পার করার কথা ছিলো, চিরায়ত সে দৃশ্য আমূল পাল্টে দিয়ে সব কিছু ওলটপালট করে দিয়েছে করোনা মহামারি।

গেল বছরের মার্চ মাসে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বন্ধ করে দেয়া হয় সারাদেশ। বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শ্রেণির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। শুরুতে কয়েকমাস পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও জুন-জুলাই থেকেই অনলাইনে শুরু হয় শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম। তবে ক্লাস পরীক্ষা নিয়মিত হলেও অনিয়মিত হয়ে পরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন ও ভাতা। যা এখনো পর্যন্ত অনিয়মিতই!

করোনা মহামারির সাথে লড়াই করে সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোনোমতে টিকে থাকলেও বেকায়দায় পড়ে যান নন-এমপিও এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। আবার করোনা সংক্রমণ বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বন্ধ হতে থাকে একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা পড়েন বিপাকে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে কিছুদিন প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাঁদের সে প্রচেষ্টাও বেশি দিন টিকিয়ে রাখা যায়নি। 

মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নন-এমপিও ও বেসরকারি শিক্ষকরা কর্মহীন হয়ে জীবন-জীবিকার সন্ধানে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন বিচিত্র পেশা। বিদ্যালয়ের প্রিয় প্রাঙ্গণ তাঁদের খুব করে টানলেও জীবিকার টানে তাঁরা হাঁটছেন অচেনা পথে। শিক্ষকতার মহান পেশা ছেড়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে বাধ্য হচ্ছেন এমন সব পেশা বেছে নিতে, যা কখনো তাঁরা কল্পনাও করেননি।

সরকার ৮০ হাজারের বেশি নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে প্রণোদনা বিতরণ করেছে। তবে এই তালিকার বাইরেই রয়ে গেছেন নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বৃহৎ অংশ। তথ্যমতে, সারা দেশে ৪ হাজার ১৫৯ প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো জাতীয়করণের বাইরে রয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার নন-এমপিও স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় এক লাখ ১০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এ বছর দুই হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় এদের মধ্যে ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি বেতনের আওতায় এসেছেন। এখনো অনিশ্চয়তায় রয়েছেন ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। ৩৫২টি নন-এমপিও কলেজের ১০ হাজার শিক্ষকের আর্থিক অবস্থাও শোচনীয়। এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। 

সরকারের কাছে এমপিও সুবিধা না পাওয়া এ শিক্ষকরা আগে প্রাইভেট-টিউশনি করে সংসার চালিয়ে নিতেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সে পথও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষক বিপদে পড়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। 

গ্রামাঞ্চলে অনেক শিক্ষক চক্ষুলজ্জা ভুলে এমন কিছু পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন, জীবনে যা তাঁরা কল্পনাও করেননি। অনেকে আবার কোনো কাজ পাননি। শিক্ষার্থীদের জীবন গড়ার এসব কারিগরের কারো হাতে এখন মোটরবাইকের চাবি, অনেকে করছেন রংমিস্ত্রির কাজ। কেউ রাস্তায় ফেরি করে বিক্রি করছেন ওষুধ। আবার কোনো শিক্ষক জীবন বাঁচাতে খুলে বসেছেন চাল-ডালের মুদি দোকান। কেউ বিক্রি করছেন ফল। সংসার চালাতে আবার কেউ বাধ্য হয়ে দিনমজুরি করছেন। সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন নারী শিক্ষক-কর্মচারীরা। না খেয়ে থাকলেও কাউকে বলতে পারছেন না।  

সম্প্রতি ফের করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা আরেক দফা মুখ থুবড়ে পড়ল। করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হলে শিক্ষকদের হতাশাও আরো দীর্ঘ হবে। এর মধ্যেই অন্যান্য প্রায় সব খাত খুলে দেয়ার কথা তুলে ধরে শিক্ষক নেতারা বলছেন, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক। একসাথে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হলেও ধাপে ধাপে শিডিউল করে শিক্ষাব্যবস্থাকে জাগিয়ে তোলা হোক।

তবে শিক্ষক নেতাদের এই দাবি এখনই পূরণ না হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের কথায়। প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য তাঁদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু এখনই খুলে দেয়া হবে কি না তা বলা মুশকিল। কারণ এটি একটি জাতীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সমন্বয়ে এ সিদ্ধান্তটি নিতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ যদি মনে করে, পরিস্থিতি এখনো প্রতিকূলে, তবে কোনোভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সম্ভব হবে না।

মন্ত্রী আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নির্ধারিত সময়েই পরিশোধ করা হচ্ছে। তাঁদের দিক থেকে কোনো অভিযোগ-অনুযোগ নেই। তবে এটা সত্যি, এর বাইরে নন-এমপিও এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মিলিয়ে বড় একটি অংশ রয়েছে, যারা ঠিকমতো বেতন পাচ্ছেন না। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কিভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো যায়, সে বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি আছে।

শিক্ষক নেতা নেকবর হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকদেরকে বাঁচতে হয় মর্যাদা নিয়ে, এজন্য অনেক শিক্ষক কোন উচ্চবাচ্য করেন না। বেতনের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেন না। সংশ্লিষ্ট সবাইকে বুঝতে হবে এটি। অথচ বেসরকারি শিক্ষকরা ভালো নেই এটা দেখেও সবাই না দেখার ভান করে আছে।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫