
উচ্চতর স্কেলে যেসব এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন কমেছে। ফাইল ছবি
চার বছর অপেক্ষার পর গত জুলাই মাসে এমপিওতে উচ্চতর স্কেল পেয়েছেন সারাদেশের বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা। আগস্টের ৩ তারিখে বেতন হাতে পান শিক্ষকরা। তবে উচ্চতর স্কেল পাওয়ার আনন্দ তাদের বিষাদে পরিণত হয়েছে। কারণ, উচ্চতর স্কেলে বেতন বাড়ার পরিবর্তে কমে গেছে। সারাদেশে চার শতাধিক শিক্ষক বেতন কম পেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফিক্সেশন জটিলতার কারণে গত জুলাইয়ে নতুন ইনক্রিমেন্ট যোগ না হওয়ায় এই বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজশিক্ষকরা বেতন কমে যাওয়ার শিকার হয়েছেন। এর জন্য তারা মাউশির খামখেয়ালিপনা ও দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করেন।
জানা গেছে, বেসরকারি কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নিরবিচ্ছিন্ন ১০ বছর চাকরি করলে নবম গ্রেড থেকে অষ্টমে উন্নীত হন। ২০১৮ সালের এমপিওভুক্তির নীতিমালায় বলা হয়, শিক্ষক-কর্মচারী চাকরিকাল ১০ বছর পূর্ণ হলে একটি এবং ১৬ বছর পূর্ণ হলে আরেকটি উচ্চতর স্কেল পাবেন। কিন্তু সেখানে ফিক্সেশন বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকায় কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে উচ্চতর স্কেল দেওয়া হয়নি।
শিক্ষকরা জানান, ২০১২ সালের সংশোধিত নীতিমালায় ফিক্সেশনের বিষয়টি স্পষ্ট করা ছিল। ওই নীতিমালার ১১.৭ ধারায় বলা ছিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা উচ্চতর স্কেল বা পদোন্নতি পেলে তার মূল বেতন বর্তমানে তার আহরিত বেতনের চেয়ে কোনোক্রমেই কম হবে না। কিন্তু এখন নিয়ম করা হয়েছে, নবম গ্রেডে কারো বর্তমান আহরিত মূল বেতন যদি ২৫ হাজার ৪৮০ টাকা হয়, তিনি অষ্টম গ্রেডে উচ্চতর স্কেল/পদোন্নতি পেলে তার মূল বেতন ফিক্সেশন করে হবে ২৬ হাজার ৬৩০ টাকা। এখানেই শিক্ষকদের বিষাদের কারণ।
জুলাই মাসের এমপিওভুক্তিতে যে কলেজশিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল দেওয়া হয়েছে, তাদের বেতন কমেছে। কলেজশিক্ষকদের চাকরি শুরুর বেতন ২২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে চারটি ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয়ে জুলাই মাসে তার আহরিত মূল বেতন দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৭৬০ টাকা।
অন্যদিকে, উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্তদের তিনটি ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। এতে তাদের আহরিত মূল বেতন দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৬৩০ টাকা। তাদের বেতন কমে গেছে ১৩০ টাকা। কিন্তু নীতিমালা অনুসারে, তাদের বেতন দাঁড়ানোর কথা ছিল ২৭ হাজার ৯৭০ টাকা। সারাদেশে অন্তত ৩৯২ শিক্ষকের বেতন কমে গেছে এবারের এমপিওতে।
বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার আজিজুল হক মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আলম উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর ভেবেছিলাম বেতন বাড়বে। কিন্তু উল্টো কমলো! বড়ই অদ্ভুত আমাদের নিয়মকানুন।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন বলেন, কোনোক্রমেই শিক্ষকদের বেতন কমবে না। যদি কারও কমে থাকে, তাহলে অবশ্যই বেতন ফিক্সেশনে ভুল হয়েছে।
মাউশির উপপরিচালক (বেসরকারি কলেজ) মো. এনামুল হক হাওলাদার বলেন, বেতন কমে যাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না।