Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

নন-এমপিও শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের টাকা পাওয়া প্রসঙ্গে

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৫৩

নন-এমপিও শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের টাকা পাওয়া প্রসঙ্গে

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আর্থিক সংকটে থাকা নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের গত ঈদুল ফিতরের আগে অনুদান প্রদানের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য পাঁচ হাজার টাকা এবং প্রত্যেক কর্মচারীর জন্য আড়াই হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের টাকা পাননি বেশির ভাগ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী। এমনকি শিক্ষক-কর্মচারীদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা তাঁদের হাতে পৌঁছে দিতে তেমন কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।

গত ১২ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) প্রেস উইংয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সারা দেশের সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক লাখ পাঁচ হাজার ৭৮৫ জন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার ৬১ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। এসব শিক্ষক ও কর্মচারীকে অনুদান দেওয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগকে প্রায় ৭৪ কোটি ৮১৭ টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রত্যেক নন-এমপিও শিক্ষক এককালীন অনুদান পাবেন পাঁচ হাজার টাকা এবং প্রত্যেক কর্মচারী পাবেন দুই হাজার ৫০০ টাকা করে।

জানা যায়, গত বছরও নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বিশেষ বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় ইআইএনধারী (শিক্ষা বোর্ডের বৈধ প্রতিষ্ঠান শনাক্তকরণ নম্বর) নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশালসংখ্যক শিক্ষক কর্মচারীর হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেইস তৈরি করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ও শিক্ষা তথ্য ব্যুরো (ব্যানবেইস)। এরপর তা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। পরে চেকের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন তালিকাভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের হাতে তা পৌঁছে দেয়। ফলে তালিকায় নাম থাকাদের প্রায় সবাই টাকা পান। তবে এবার মোবাইলব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা দেওয়াতেই বিপত্তি সৃষ্টি হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন সম্প্রতি বলেছেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের সঙ্গে মোবাইল নম্বরের নামের মিল না থাকায় কিছু শিক্ষক-কর্মচারী এখনো টাকা পাননি। শিক্ষকরা যে মোবাইল নম্বর দিয়েছেন তাতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানো হচ্ছে অন্যজনের। এসব জটিলতা নিরসন করে দ্রুত শিক্ষক-কর্মচারীদের টাকা পাঠাতে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই এর সমাধান হবে।’

জানা যায়, মফস্বলের কিছু শিক্ষকের মোবাইল অ্যানালগ সিস্টেমের। তাদের মোবাইল ব্যাংকিংও নেই। তবে প্রণোদনার টাকা আসবে জানতে পেরে আত্মীয়-স্বজনদের মোবাইল নম্বর দিয়েছেন; সঙ্গে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েছেন। তবে এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। অনেক শিক্ষকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সম্পূর্ণ মিল থাকার পর তারা অনুদানের টাকা পাচ্ছেন না।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমাদের স্কুলে শিক্ষক ৪৩ জন ও কর্মচারী ১৩ জন। ব্যানবেইসের তালিকায়ও সবাই অন্তর্ভুক্ত। তার পরও মাত্র দুজন শিক্ষক প্রধানমন্ত্রীর এই বছরের অনুদানের টাকা পেয়েছেন। আমরা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ অনেকের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছি, কিন্তু কেউ কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না।’

ময়মনসিংহের তারাকান্দার ফজলুল হক চৌধুরী মহিলা কলেজের প্রভাষক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কলেজে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৪০ জন। এর মধ্যে মাত্র পাঁচজন প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। আমার মোবাইল ব্যাংকিং ও জাতীয় পরিচয়পত্র সব কিছুই ঠিক আছে। তার পরও টাকা পাচ্ছি না। শিক্ষা কর্মকর্তাদের বললে তারা বলেন, ডিসি অফিসে যোগাযোগ করেন। আর ডিসি অফিস থেকে বলা হয়, তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো চিঠি নেই।’

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুদান শিক্ষকদের জন্য বড় সম্মানের। এটা যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছানো উচিত। এ ছাড়া অনেক শিক্ষক করোনাকালীন আর্থিকভাবে প্রচণ্ড সমস্যায় আছেন। এই টাকা হাতে পেলে কিছুটা হলেও দুর্দশার লাঘব হতো, কিন্তু পাঁচ মাসেও টাকা হাতে না পাওয়াটা দুঃখজনক।’

এই শিক্ষক নেতা আরো বলেন, ‘গত বছর অনুদানের টাকা চেকের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল। তখন কিন্তু টাকা না পাওয়ার কোনো অভিযোগ ছিল না। এবার যদি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা দিতে গিয়ে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আগের পদ্ধতিতে টাকা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। কারণ যেসব শিক্ষক-কর্মচারীর মোবাইল নম্বরের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের মিল নেই, তা সহসা ঠিক করা সম্ভব নয়। অনেক শিক্ষকের সবকিছু ঠিক থাকার পরও তারা টাকা পাচ্ছেন না, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের এই টাকা নিয়ে আর কালক্ষেপণ করা শিক্ষক সমাজের কাম্য নয়।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫