Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ২২ বছর

Icon

মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২১, ১০:৫৯

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ২২ বছর

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা আর গবেষণার বদৌলতে মানুষ আজ অনেক অজানাকে জেনেছে, অসাধ্যকে সাধন করেছে ও পৌঁছেছে উন্নতির স্বর্ণশিখরে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার গুরুত্ব আজ সমগ্র পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত ও অনস্বীকার্য। বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) গৌরবময় ভূমিকা সর্বজনবিদিত। 

বর্তমানে গবেষণায় বাংলাদেশে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়কসহ বিশ্বের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি বর্তমানে দেশের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পছন্দের অন্যতম তালিকায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকমণ্ডলী, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে।

আজ ১২ অক্টোবর (মঙ্গলবার) মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

উপমহাদেশের ইতিহাসে ১৯৫৭ সালের ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে মাওলানা ভাসানী সন্তোষে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। ১৯৭০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের সন্তোষে অনুষ্ঠিত এক বিশাল সম্মেলনে মাওলানা ভাসানী ‘আমার পরিকল্পনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে একটি লিখিত বক্তব্যের (নিবন্ধন) মাধ্যমে মাওলানা ভাসানী তার প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়) চূড়ান্ত প্রস্তাব পেশ করেন। 

প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় এর পাঁচটি মূলনীতি ছিল? ক. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জন্যে যে কোনও একটি কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক থাকবে। খ. প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জন্য নির্দিষ্ট মাত্রার দৈহিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক থাকবে। গ. প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে তার ধর্মের মূলশিক্ষা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে দেয়া হবে এবং তা অনুশীলন করা বাধ্যতামূলক থাকবে। ঘ. কেরোসিন তেল ও লবণ ছাড়া বাকি সবকিছু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে উৎপাদন করে নিতে হবে । ঙ. প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষাবর্ষগুলোর মধ্যে চার-পাঁচ সপ্তাহ কাল প্রত্যন্ত গ্রামে কিংবা শিল্প এলাকায় হাতেকলমে কাজ করতে হবে।

নানা প্রতিবন্ধকতার পর ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নামে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয় ২০০১ সালের ১২ জুলাই ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে ২০০৩ সালের ২৫ অক্টোবর। যা টাঙ্গাইল শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।

৫৭.৯৫ একর (২৩.৩২ অধিগ্রহণকৃত) আয়তনের উপর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে ১৮টি বিভাগ চালু রয়েছে। সম্প্রতি 'মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং' বিভাগ খোলার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ হাজার ৩৩৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, এর মধ্যে ছাত্র তিন হাজার ১০৩ জন ও ছাত্রী দুই হাজার ২৩০ জন। যার মধ্যে স্নাতক/ইঞ্জিনিয়ারিং পর্যায়ে  চার হাজার ৩২৬ জন, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৯৬৮ জন, পিএইচডিতে ১৫ জন ও পিজিডি-ইন-আইসিটি ২৪ জন অধ্যয়নরত। মোট শিক্ষক সংখ্যা ২৪৩ জন, এছাড়া ২৪৯ জন কর্মকর্তা ও ৩৬৬ জন কর্মচারী রয়েছে। 

শিক্ষার্থীদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান হল, আলেমা খাতুন ভাসানী হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হল, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হল, শেখ রাসেল হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল নামে সাতটি হল রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএসসির (ইঞ্জিনিয়ারিং) এক হাজার ৪২৯ জন, বিএসসির (অনার্স) দুই হাজার ৬৩৪ জন, বিবিএ’র ২৭৯ জন, বিএসএসের (অনার্স) ১৮৩ জন, বি ফার্মের ২৭ জন, এমএস/এমএসসির এক হাজার ২৯৬ জন, এমএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং)/এম ইঞ্জিনিয়ারিং’র ২০৫ জন, এমএসএসের ২৮ জন, এমবিএ’র ১০৮ জন, পিজিডি-ইন-আইসিটিতে ২৮৭ জন শিক্ষার্থী ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রায় ২০ হাজার বই, ৯৪১টি জার্নাল এবং সাময়িকী ও প্রায় ৩০ হাজার ই-বুক রয়েছে। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাথে চীনের স্বনামধন্য পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্নারক রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো : China Three Georges University, Hubei University PR China, Chengdu Textile College (CTC) China, University of Electronics Science & Technology China ও Shenyang University of Chemical Technology (SUCT) China

বর্তমান বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার ও বাংলাদেশের ‘রূপকল্প’ ও ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ২০৪১’ বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রায় সমাপ্তির পথে। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২২ বছরে পদার্পণ করলেও ২০০৮ সাল পর্যন্ত অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র সন্তোষজনক ছিল না। বর্তমান সরকারের সময়ে এসে এর অগ্রযাত্রা শুরু হয়ে বর্তমানে এর উন্নয়ন চিত্র চোখে পড়ার মতো হয়েছে। 

অনুমোদিত প্রকল্পটির আওতায় বাস্তবায়নাধীন ১২.৭৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, ১২ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক-কাম-রিসার্চ ভবন নির্মাণ, ১০ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক অ্যানেক্স উত্তর ভবন নির্মাণ, ২৫০ ছাত্রের জন্য নির্মাণাধীন জননেতা আব্দুল মান্নান হলের অবশিষ্ট তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলার সম্প্রসারণ, ৭০০ ছাত্রীর জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ নির্মাণ, ৫৫০ ছাত্রের জন্য ১০ তলা ভিতে পাঁচ তলা পর্যন্ত  ‘শেখ রাসেল হল’ নির্মাণ, ১০ তলা ভিতে পাঁচতলা পর্যন্ত মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ, সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ১০ তলা ভিতে পাঁচতলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন নির্মাণ।

এছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট স্থাপন, মাটি ভরাটসহ অভ্যন্তরীণ আরসিসি রাস্তা নির্মাণ কালভার্ট নির্মাণ, আরসিসি ড্রেইন ও ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন নির্মাণ, নতুন স্থাপনায় গ্যাস লাইন সংযোগ, প্রস্তাবিত ভবনের জন্য আসবাবপত্র ক্রয়, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি/ল্যাব যন্ত্রপাতি, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয়, ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয়, অফিস যন্ত্রপাতি ক্রয়, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের জন্য বই ও সাময়িকি ক্রয়, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দুইটি বাস, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য একটি মিনিবাস ও একটি মাইক্রোবাস ক্রয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন কাজ বর্তমানে সমাপ্তির পথে। 

আশা করা যাচ্ছে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ সমাপ্ত হলে শিক্ষা, প্রশাসন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন ও উন্নত শিক্ষার পরিবেশ পাবে যা দক্ষ মানব সম্পদ গঠনে সহায়ক হবে।

করোনাকালীন পরিস্থিতি ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমস্যা সেশনজট। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ স্নাতক/ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী সম্পন্ন করতে লাগছে ৫ থেকে ৬ বছর এবং স্নাতকোত্তরে লাগছে ১.৫ থেকে ২ বছর। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ৭ থেকে ৮ বছর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মানিক শীল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বেশিই ভালবাসে এ কারণে ছাড়তে চায় না, আমাদেরও যেতে ইচ্ছা করে না। অভিমান-ক্ষোভ যতই থাক, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি ছাপিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সেরা তালিকায় উঠে আসুক সেই প্রত্যাশা রাখি, এগিয়ে যাক সামনের দিকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নুরে আলম মাসুম বলেন, প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা মনে পরলেই নস্টালজিয়ায় ভুগি। সংস্কৃতিমনা মানুষ ছিলাম বলে ক্যাম্পাসে ঘটনাবহুল সময় পার করেছি আমি। যৌবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়টা কাটিয়েছি সন্তোষের প্রতিটি অলিগলিতে। মাভাবিপ্রবি আমার পরিচয়, আমার এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সমগ্র বিশ্বে গবেষণা ও সৃষ্টিশীলতার এক অনন্য নাম হয়ে উঠুক মাভাবিপ্রবি। ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই আমার প্রত্যাশা।

২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোকাদ্দেছ আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে, সরকার ঘোষিত নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ সকল কর্মসূচি পালন করা হবে। 

আজ সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন, ১০টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যূরালে ও মাওলানা ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ১০টা ২০ মিনিটে পায়রা, বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা, কেককাটা ও বাদ যোহর দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫